বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার প্রত্যাশায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকাগামী বিমানের টিকিট কাটতে শুরু করেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই রুটে টিকিট পাওয়া বেশির ভাগের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি ফ্লাইটের সব শ্রেণির টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি চাপ ও আগ্রহ।
বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party) সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ডিসেম্বরের শেষ দিকে লন্ডন–ঢাকা রুটে টিকিটের চাহিদা প্রতিবছরই তুলনামূলক বেশি থাকে। এবার তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণার কারণে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিমানের আসন প্রাপ্যতার ওপর।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস (Biman Bangladesh Airlines)-এর ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ঢাকাগামী দুটি ফ্লাইটের সব শ্রেণির টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, তারেক রহমান ২৪ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) ১২ ডিসেম্বর এক বক্তব্যে জানান, তারেক রহমান ঢাকায় পৌঁছাবেন ২৫ ডিসেম্বর।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২৫ ডিসেম্বর থেকে বড়দিন ও সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়ানোর লক্ষ্যেই এই সময়টিকে সফরের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। দলীয় ও প্রশাসনিক উভয় দিক বিবেচনায় নিয়েই তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিমান বাংলাদেশের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বড়দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার প্রবণতা বরাবরের মতোই বেশি। চলতি বছরও সেই ধারা অব্যাহত থাকায় ডিসেম্বরের শেষ দিকের ফ্লাইটগুলোর অধিকাংশ টিকিট আগেভাগেই বুকিং হয়ে গেছে।
দলীয় একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ২০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে লন্ডনে যাবেন। এরপর ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান এবং তাঁদের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান একসঙ্গে ঢাকায় ফিরবেন। এই সফরে তাঁদের সঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া দুজন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য থাকার কথা রয়েছে, যদিও তাঁরা সাদাপোশাকে থাকবেন।
সূত্র জানায়, ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে লন্ডন ত্যাগ করবেন তারেক রহমান। ওই দিনের বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি হবে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে পরিচালিত। ফ্লাইটটিতে ২৪৭টি ইকোনমি, ৩০টি বিজনেস ক্লাস এবং ২১টি প্রিমিয়াম ইকোনমি আসন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই ফ্লাইটের সব আসনের টিকিটই ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট কিনতে প্রবাসী নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা জানান, যেসব ফ্লাইটে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর জন্যই অনেকে বুকিং দিচ্ছেন। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ কিংবা সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনছেন। সবার লক্ষ্য একটাই—২৫ ডিসেম্বর সকালের মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport)-এ পৌঁছানো।
এদিকে, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে তাঁর বাসভবন ও কার্যালয়ের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-এর বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালের এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নিয়ে আসছেন তিনি।


