একদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ, অন্যদিকে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সন্তান নেওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়া—এই দুই চাপেই রাশিয়ায় প্রতি বছর জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। এমন বাস্তবতায় জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একের পর এক ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা সামনে আনছেন ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। এসব উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাতের নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার প্রস্তাব।
লাইভ মিন্ট (Live Mint)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বজুড়ে যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমেই নিম্নমুখী, তখন রাশিয়া (Russia) এক ভিন্নধর্মী পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশটিতে রাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এই প্রস্তাবের পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, রাতের বেলায় স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর অভ্যাস কমলে মানুষ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারবে এবং পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে উৎসাহিত হবে। এর ফলে দাম্পত্য সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে এবং সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
প্রস্তাবটির সমর্থকদের মতে, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা আমূল বদলে দিয়েছে। রাত জেগে স্ক্রিনে ডুবে থাকার প্রবণতা কেবল ঘুমের ক্ষতি করছে না, একই সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগও দুর্বল করে দিচ্ছে। এই সামাজিক পরিবর্তনই জন্মহার হ্রাসের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে বলে তাদের দাবি। জনসংখ্যাগত সংকট মোকাবিলায় তাই জীবনযাপনের এই ধারা বদলানো জরুরি।
তবে সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তাদের মতে, জন্মহার কমে যাওয়ার পেছনে বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট নয়, বরং আবাসন সংকট, উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং সন্তানের শিক্ষা ও লালন-পালনের বাড়তি খরচের মতো অর্থনৈতিক বাস্তবতাই পরিবার পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা রাখছে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যারা রাতে কাজ করেন, অনলাইন ক্লাসে অংশ নেন, ফ্রিল্যান্সিং করেন কিংবা চিকিৎসা পেশায় যুক্ত—তাদের জন্য এই ‘প্রেমময় অন্ধকার’ আদৌ কতটা বাস্তবসম্মত? সমালোচকদের মতে, রাষ্ট্রীয় নির্দেশ দিয়ে আবেগ বা রোমান্স তৈরি করা সম্ভব নয়।
এদিকে জনসংখ্যা বাড়াতে আরও কিছু ব্যতিক্রমী প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘মিনিস্ট্রি অব সেক্স’ চালুর ভাবনা। পাশাপাশি প্রথম সন্তানের জন্ম দিলে পাঁচ হাজার রুবল পর্যন্ত ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিয়ের পর প্রথম রাতে বিশেষ কোনো স্থানে সময় কাটানোর জন্যও আলাদা আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব তুলেছেন নীতিনির্ধারকরা।
শুধু তাই নয়, মাতৃত্বকালীন সহায়তার পাশাপাশি বাবাদের জন্যও বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রুশ সরকার। বর্তমানে এককালীন প্রসবকালীন অর্থ প্রদান, বর্ধিত মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং পরিবারগুলোর জন্য নিয়মিত আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালু রয়েছে। এমনকি, ১০টির বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীদের জন্য সোভিয়েত আমলের ‘মাদার হিরোইন’ পুরস্কারটিও পুনরায় চালু করা হয়েছে।
এর আগেও জন্মহার বাড়ানোর বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। গত বছরের শেষ দিকে তিনি কর্মক্ষেত্রে মধ্যাহ্নভোজ বা কফি বিরতির ফাঁকে সঙ্গমের পরামর্শ দেন। তার এই বক্তব্যের পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।


