বিজয় দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (Jagannath University) ক্যাম্পাসে প্রথমে পাকিস্তানের পতাকা আঁকার ঘটনার পর তার পাশেই এবার ভারতের পতাকা এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই পতাকাটি আঁকেন বলে জানা গেছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) বাংলাদেশের বিজয়কে ভারতের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ হিসেবেই তারা ভারতের পতাকা আঁকার উদ্যোগ নেন।
এর আগে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে, অর্থাৎ রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পাকিস্তানের পতাকা আঁকা শুরু করেন শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রঅধিকারের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ সময় ক্যাম্পাসের ফটক দিয়ে শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস বের হতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও কয়েকজন শিক্ষার্থী বাধা দিতে গেলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রূপ নেয়।
পরবর্তীতে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল এবং সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রধান ফটকে রাতভর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্যের গাড়িও অবরোধ করেন। ভোর প্রায় ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, জুলাইয়ের পর তারা ভেবেছিলেন ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের গ’\ণহ’\ত্যা এবং মা-বোনের ওপর নি’\র্যা’\তনের প্রতীকী প্রতিবাদের সময় কিছু বাংলাদেশবিরোধী দালাল হামলা চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, জবিতে কোনো স্বৈরাচার কিংবা মবতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং ছাত্রদল সবসময় বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, বিজয়ের মাসে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে গেলে প্রথমে প্রক্টরিয়াল বডি বাধা দেয়। পরে আস-সুন্নাহ হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলেও তিনি দাবি করেন। এ সময় সাংবাদিকদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের গ’\ণহ’\ত্যায় কিছু পাকিস্তানপন্থী সমর্থন দিয়েছিল এবং তাদের প্রেতাত্মারা এখনো বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। পাকিস্তানকে হেয় করা হলে তাদের অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি হয় বলেই এই প্রতীকী প্রতিবাদে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তার মন্তব্য।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এ ধরনের পতাকা আঁকতে হলে পূর্বানুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্টরা অনুমতি ছাড়াই পতাকা অঙ্কন করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস ক্যাম্পাস থেকে বের হতে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে তিনি জানান।


