নির্বাচনের আগেই দায়িত্ব নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন আগামী জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন। দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস-এর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র কালবেলা-কে নিশ্চিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন। সিনেটের শুনানি শেষে অক্টোবর মাসে তার মনোনয়ন অনুমোদন হয়। অনুমোদনের পর এক লিংকডইন পোস্টে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিনেটের অনুমোদন পেয়ে আমি সম্মানিত এবং এর জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।”

ক্রিস্টেনসেন একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক ও সিনিয়র ফরেন সার্ভিস কাউন্সেলর। এর আগে তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকবিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডে (USSSTRATCOM) কমান্ডারের বৈদেশিক নীতি উপদেষ্টা ছিলেন।

এছাড়াও তিনি ম্যানিলা, সান সালভাদর, রিয়াদ ও হো চি মিন সিটিতে মার্কিন দূতাবাসে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ন্যাশনাল ওয়ার কলেজ থেকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ক্রিস্টেনসেন
সিনেট শুনানিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, আসন্ন নির্বাচন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গঠনে পাশে থাকবে, বাণিজ্য বাধা কমিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করবে।”

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, “যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকবে। ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের অতীত অভিজ্ঞতা ও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশে সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে।”

তারা আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায় না কোনো র‌্যাডিক্যাল উপাদান মূলধারায় এসে দেশ অস্থির হয়ে উঠুক। ফলে, ক্রিস্টেনসেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় হতে পারে—আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠানো থেকে শুরু করে অনিয়ম হলে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ পর্যন্ত।”

পিটার হাসের বিদায়ের পর নতুন অধ্যায়
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ২০২২ সালের মার্চে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার বিদায়ের পর থেকে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন।

ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের আগমনকে ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিনি শুধু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। বিশেষ করে বর্তমান ‘রিভেঞ্জ পলিটিক্স’ ও বিদেশি প্রভাব মোকাবিলায় তার কূটনৈতিক দক্ষতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *