হাদির সাথে ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো এক চিকিৎসক

তরুণ রাজনীতিক ওসমান হা’\দির নি’\হ’তের ঘটনায় জড়িত শ্যু’\টার ফয়সাল করিম ওরফে দাউদকে হা’\দির ঘনিষ্ঠ বৃত্তে কে নিয়ে এসেছিলেন? ফয়সালের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার তথ্য কি হাদির জানা ছিল? এবং ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে যে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রকাশ ঘটে, সেগুলোর পেছনে কে বা কারা অর্থ ঢালছে—তা নিয়েও উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। এই প্রসঙ্গেই ব্যক্তিগত অবস্থান ও অনুসন্ধানের দিক তুলে ধরেছেন জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Saer), যিনি আল জাজিরা-র একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক।

হাদি বেড়ে উঠেছিলেন ঝালকাঠিতে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে এসে ঢাকায় তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। কিন্তু ঢাকায় অবস্থানকালে তাঁর সকল ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের চিনে ওঠা সম্ভব ছিল না। সেই সুযোগে কে ফয়সালকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন? এমন একজন ব্যক্তি, যার ওপর হাদি আস্থা রেখেছিলেন। ফয়সালের অতীত ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা কি তখন গোপন রাখা হয়েছিল? হাদি কি জানতেন কার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন? সায়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন, পরিচয় করিয়ে দেওয়া ব্যক্তিটি একজন চক্ষু চিকিৎসক, যার অবস্থান ছিল শুক্রাবাদ এলাকায়।

এখানেই থেমে থাকেননি সায়ের। তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময় ঢাকার রাজনীতিতে যেসব সংগঠনের প্রকাশ ঘটে, যেমন দায়রা, ইনকিলাব মঞ্চ—এসবের পেছনের অর্থ কোথা থেকে এলো? অর্থায়নের উৎস কি দেশের অভ্যন্তরে, না কি কোনো বিদেশি রাষ্ট্র? তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, অর্থায়নকারী রাষ্ট্রটি এই উপমহাদেশের নয়, বরং তাদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সে উদ্দেশ্য পূরণে তারা বারবার একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল এবং তার ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, স্কলারশিপ দিয়েছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে অবস্থানরত একটি গণমাধ্যমের সম্পাদককে কেন্দ্র করে একটি প্রভাববলয় গড়ে তুলেছে।

এই জটিল চক্র, অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, রাজনৈতিক সংযোগ এবং পররাষ্ট্র-সম্পৃক্ত প্রভাব—সব মিলিয়ে একটি বিস্তৃত ষড়যন্ত্রের ছাপ উঠে আসছে। সায়ের আহ্বান জানিয়েছেন, যারা সত্য জানতে চান, তারা যেন নিজেরাই তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তাঁর মতে, বুদ্ধির প্রয়োগ করলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

নীচে জুলকারনাইন সায়ের-এর মূল ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

“আপনার প্রতি ভালোবাসা কমে যাচ্ছে” অথবা “আপনি এখন বিক্রিত” কিম্বা “আপনি বিশেষ দলের হয়ে কাজ করেন” আর বিভিন্ন সুন্দর শব্দচয়ন তো আছেই। এসব লিখেই গতকয়েকদিন আমাকে অনেকে বার্তা পাঠিয়েছেন।
এখন কথা হইলো আমি তো বলি নাই আমার সাথে প্রেম করেন বা আমার সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ান। আমি করি সাংবাদিকতা, আমি ঠিক সেই কাজটাই করি যেটা আমার ‘Conscience’ বা ‘বিবেক’ সমর্থন করে। আপনি আমারে পাথর বা গু’\লি মাইরাও বিবেকবর্জিত কিছুর সাথে জড়াতে পারবেন না।
আর আপনি আমারে কিনলেনই বা কখন যে বিক্রি হবো? যে জিনিষ বিক্রয়যোগ‍্য না সেটা আবার বিক্রি হয় কেমনে? আর বিশেষ দলের হয়ে কাজ করার কথাটা সত্য — আমি সব সময়ই বাংলাদেশ নামের যে দেশটা আছে সেই দেশ ও দেশের নাগরিকদের স্বার্থের পক্ষে ছিলাম, আছি ও থাকবো ইনশাল্লাহ। আপনি যদি বাংলাদেশকে একটা দল ভাবেন, তাহলে আমি অবশ‍্যই বাংলাদেশ দলের লোক। আমার মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, নারীদের অগ্রগতি, সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের নাগরিকদের সাথে শান্তিতে বসবাস এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া এসবের কোনটাই আপোষযোগ‍্য নয়।
আর আবেগ বা পপুলারিজমের দেওয়ানা হইলে তো আপনাগো সামনে আইসা ভ‍্যাঁ-ভ‍্যাঁ কইরা কান্দাকাটি করতাম। কিম্বা বিভিন্ন রকম কোমল কথা বইলা নিজের আবেগ এক্সপ্রেস করতাম। অথবা কানতাছি এমন ছবি পোস্টাইতাম। জীবনে দেখছেন আমারে এমন কিছু করতে? দেখবেনও না। কারণ আপনার লগে প্রেম বা আবেগীভাবে কানেকশন তৈরির কোন প্রয়োজন আমার নাই।
ক্ষমতা ও ক্ষমতাবানদের জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, রাষ্ট্র লুকিয়ে রাখতে চায় কিন্তু আপনার জানা প্রয়োজন এমন সত্য এবং যা কিছু আপনার স্বার্থ ও রাষ্ট্রের মূল্যবোধের বিপরীত — এসব সামনে এনে আপনাকে জানানোই আমার প্রধান কাজ। এখন সেটা আপনার ভালো লাগুক বা খারাপ এতে আমার কিছু যায় আসবে না।
এবার অন‍্য প্রসঙ্গে আসি।
তরুন নেতা ওসমান হাদির সাথে তাঁর হ’\ত্যা’র সাথে জড়িত শ্যু’\টার ফয়সাল করিম ওরফে দাউদের পরিচয় কে করিয়ে দেয়? হাদি ঢাকার বাসিন্দা না, বেড়ে উঠেছিলো ঝালকাঠিতে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুবাদে তাঁকে ঢাকায় আসতে হয়, স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় অনেককে তাঁর পক্ষে হয়তো চেনা সম্ভব ছিলোনা।
ঢাকায় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্য হতে কে সেই ব্যক্তি যে হাদি’র সাথে ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং কার ভরসায় হাদি ফয়সালকে নিজের সার্কেলে নিয়ে নেয়? এটার উত্তর আপনারাই খুঁজে বের করেন। আর যিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন, তিনি কি জানতেন না যে ফয়সাল ছেলেটা ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট? ফয়সালের ছাত্রলীগের সম্পর্ক কি ওসমান হাদিকে জানানো হয়েছিলো? আমি একটু ক্লু দিতে পারি, (চক্ষু চিকিৎসক, শুক্রাবাদ)।
৫ আগষ্ট ২০২৪, পরবর্তী সময় দায়রা, ইনকিলাব মঞ্চ সহ আরো কিছু সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বিষয়টা এমন না যে এর আগে এসব সংগঠনের অস্তিত্ব ছিলো না, অবশ্য‍ই ছিলো কিন্তু সেটা প্রকাশ‍্যে না। তবে ২০২৪ এর আগষ্ট পরবর্তী সময় তারা নিজেদের সামনে এনেছে। এসব সংগঠনের অর্থায়ন কারা করছে? যদি কোন বিদেশি রাষ্ট্র করে থাকে তাহলে তারা কারা? এবং আপনি নিশ্চই অহেতুক কাউকে অর্থায়ন করবেন না? কোন উদ্দেশ্যে নিয়েই করবেন। সেই উদ্দেশ‍্যটা কি? একটা ক্লু দেই (এই উপমহাদেশের কোন রাষ্ট্র সেই অর্থায়ন করছেনা)।
যেই রাষ্ট্রটি অর্থায়ন করেছে, সেটা যখন বের করবেন, তখন এটাও একটু ‍যাচাই করে দেখবেন আগষ্ট ২০২৪ পরবর্তী সময় হতে কোন বিশেষ দলকে তারা বারবারই নিজেদের মেহমান বানিয়েছে। বিশেষ দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদেরও নিজ দেশে নিয়ে গেছে। বিগত বছরগুলোতে তাদের পছন্দের এই সংগঠন সংশ্লিষ্টরাই সে দেশে বেশিরভাগ স্কলারশিপ পেয়েছে। দীর্ঘদিন সেদেশে থাকা একটি পত্রিকার সম্পাদকের সাথেই বা তাদের সম্পর্ক কি? তাদের ওপর ভর করে আরো দুটি দেশ (পশ্চিমা ও পূর্বের) বাংলাদেশে আসলে কি করার পরিকল্পনা করছে?
নিজের মেধার প্রয়োগ করুন। অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *