আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা, বিএনপিকে উস্কানিকে পা না দিতে পরামর্শ সিনিয়র সাংবাদিকদের

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সম্ভাব্য গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশে যে কোনো সময় বিশৃঙ্খলা ও উসকানির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে বিএনপিকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা প্রবল এবং এসব মোকাবেলায় বিএনপিকে দায়িত্বশীল ও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।

রোববার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন দেশের শীর্ষ সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা। নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে আয়োজিত এ সভায় তারা নির্বাচন নিয়ে নানা চক্রান্ত মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

মতবিনিময় সভায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, তফসিল ঘোষণার পর দেশজুড়ে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দল-মত নির্বিশেষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মতামত জানতে চেয়েছে বিএনপি। এতে দেশের প্রায় সব বড় পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র রক্ষায় দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপির কাছে প্রত্যাশা রয়েছে, তারা নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করবে। তারা বলেন, একটি নেতার অভাব আজ দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট, আর সেই জায়গায় তারেক রহমানকে অনেকে সমাধান হিসেবে দেখছেন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে স্পষ্ট বার্তা

সভায় উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন, বিগত সরকারের সময় গণমাধ্যমকে নানা ধরনের চাপ ও দমন-পীড়নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। হ’\ত্যা হুমকি, গু’\লি ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। মালিকানা বদল, সম্পাদক সরানোসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ হয়েছে।

তারা বলেন, তুলনামূলকভাবে বিএনপির শাসনামল ছিল গণমাধ্যমবান্ধব। এবার তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তবে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট এখন নেতৃত্বের সঙ্কট। তারেক রহমানকে নিয়ে আগেও দ্বিমত ছিল, এখন অধিকাংশ মানুষ তার নেতৃত্বে আস্থা রাখছে।’

বিএনপিকে ধৈর্যের প্রশংসা, কিন্তু প্রশ্নও রয়েছে

বক্তারা বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কৌশল ও ধৈর্যের প্রশংসা করলেও তাদের কাছ থেকে আরও জোরালো অবস্থান চেয়েছেন। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গে উঠে আসে আলোচনায়। যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদ প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি কি এসব ঘটনার বিরোধিতা যথেষ্ট জোর দিয়ে করেছে?

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় না থেকেও বিএনপি কি এসব হামলার বিরুদ্ধে যথেষ্ট জোরালোভাবে কথা বলেছে? এ বিষয়ে দলের অবস্থান আরও দৃঢ় হওয়া উচিত ছিল।’

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বিগত ফ্যা’\সি’\বা’\দী শাসন গণমাধ্যমের জন্য অত্যন্ত দুঃসহ ছিল। এখন যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাদের উচিত হবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় স্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা করা।

তারেক রহমানকে নিয়ে ভিন্নমত কমে এসেছে

সভায় বেশ কয়েকজন বক্তা বলেন, মাসখানেক আগেও অনেকের মনে তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু এখন তার অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ়। এ প্রসঙ্গে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমন বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই নিরাপদ থাকতে চাই, কথা বলতে চাই। সাংবাদিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। না হলে আবারো আমাদের সমালোচনা করতে হবে, যদিও তা হ’\ঠ’\কা’\রি না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

গণমাধ্যমকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস বিএনপির

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অতীতের ফ্যা’\সি’\বা’\দী সরকারের দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই বিএনপি গণমাধ্যমের পূর্ণ সহযোগিতা দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডেমোক্রেসি চেয়েছিলাম, কিন্তু হয়ে গেছে মবোক্রেসি। এর দায় সরকারের।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ আমাদের দেয়, তাহলে আমরা গণমাধ্যমের পাশে থাকব, অতীতের তিক্ততা ভুলে সামনে এগোব।’

সভায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে সাংবাদিকতার ওপর নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। এ সময় নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে।

অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যম ও ব্যক্তিত্বরা

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ইনকিলাব, মানবজমিন, যমুনা টিভি, যায়যায় দিন, যুগান্তর, সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, চ্যানেল ২৪, এটিএন বাংলা, বাংলা ভিশন, একাত্তর টিভি, এনটিভি, বৈশাখী টিভি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, মাছরাঙ্গা, নাগরিক টিভি, জিটিভি, এটিএন নিউজ, দেশ টিভি, সময় টিভি, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা মেইল, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দেশ রূপান্তর, বাসস, ডেইলি সান, আমাদের সময়, স্টার নিউজ, মোহনা টিভি, গ্রিন টিভি, দীপ্ত টিভি প্রমুখের শীর্ষ সম্পাদক ও সাংবাদিকরা।

বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিহ উল্লাহ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মাহাদী আমীন, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আতিকুর রহমান রুমন, মীর হেলাল, মোর্শেদ হাসান খানসহ শীর্ষ নেতারা।

এই মতবিনিময় সভা দেশের রাজনীতির এক সংকটময় সময়ের প্রেক্ষিতে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করল, যেখানে গণমাধ্যম ও রাজনীতি দুটোই নিজেদের ভূমিকা পুনরায় পর্যালোচনার মুখোমুখি হলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *