জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে সরকার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষত জুলাই আন্দোলন-এ সম্মুখসারিতে থাকা কয়েকজন নেতা ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের জন্য দেওয়া হয়েছে গানম্যান। সেই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এই তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সরকারি সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে এদের ভূমিকা নজরে রেখেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এসব ব্যক্তি ‘পটেনশিয়াল থ্রেট’ বা সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। তাই ডিএমপি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-এর মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে নিরাপত্তা প্রদান শুরু হয়েছে। তবে এখনো এসব ব্যবস্থা অফিশিয়াল নয়, লিখিত আবেদন পাওয়ার পর তা স্থায়ী করা হবে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন,
“যারা বেশি ভা’\র’\না’\ব’\ল বা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের একজন অস্ত্রধারী রক্ষী দিয়েছি। যাদের ঝুঁকি কম, তাদের চলাফেরার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “সব বিষয় আমি বলতে পারব না। এসবির অতিরিক্ত আইজিপি বিষয়টি দেখছেন।”
গানম্যান চেয়ে আসা ব্যক্তিদের অনেকেই শিক্ষার্থী বা তরুণ সমাজের প্রতিনিধি। যাদের নেই ব্যক্তিগত যানবাহন—তারা চলাফেরা করেন রিকশা বা পাবলিক বাসে। ফলে এই ধরনের প্রার্থীদের সঙ্গে গানম্যান সরবরাহ করাও কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, “সবাই গানম্যান চাইছেন, কেউ কেউ অস্ত্রও। তবে গানম্যান চাওয়ার সংখ্যা এত বেশি যে সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। যাদের নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে, কেবল তারাই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-এর একটি সূত্র জানায়, রবিবার পর্যন্ত লিখিতভাবে ১২ জন আবেদন জমা দিয়েছেন। মৌখিকভাবে নিরাপত্তা চাইলেও তাতে সাড়া দেওয়া যাচ্ছে না। লিখিত আবেদন গ্রহণ করে দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সভা বসছে, সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধাদের অধিকাংশ এখন সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী। এদের মধ্যে কয়েকজন অস্ত্রের লাইসেন্স না চাইলেও গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন।
তবে এখনো কারো জন্য নিরাপত্তা ‘অফিশিয়ালি’ অনুমোদিত হয়নি। ডিএমপি ও এসবি থেকে যাদের অস্থায়ী গানম্যান দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারের ‘পাইলট প্রকল্প’ বা জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছেন। লিখিত আবেদন ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরই বিষয়টি স্থায়ী রূপ পাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণ নেতৃত্ব ও আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠা জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়ার এই উদ্যোগ রাজনৈতিক মাঠের উত্তেজনা ও হুমকি পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই ঝুঁকি আরও বাড়বে বলেই অনুমান।


