বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত চার প্রার্থীর মধ্যে দুজনই আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা হওয়ায় জেলা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মাত্র এক বছর আগে বিএনপিতে যোগ দেওয়া সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মন্ডল। তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। অতীতে তিনি চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
অন্যদিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সভাপতি সোমনাথ দে। তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে চলতি বছরের মার্চে কপিল কৃষ্ণ মন্ডল গ্রেপ্তার হন। অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেন সোমনাথ দে। কারামুক্ত হওয়ার পর গত ২০ আগস্ট বিএনপিতে যোগ দেন তারা দুজন।
ফেসবুক ব্যবহারকারী মো. আসাদ লেখেন, ‘চিহ্নিত ফ্যাসিস্টদের দিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণের কাজ করা অন্যায়। তাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
আরেক ব্যবহারকারী মো. শিমুল লেখেন, ‘সারা বছর রাজপথে থেকেও যারা মনোনয়ন পায়নি, তাদের বাদ দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। বিএনপির জনগণ এটা মেনে নেবে না।’
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে।’
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এটা কীভাবে মেনে নেবে? তারা সুবিধাবাদী ছিলেন। এতে নেতাকর্মীরা হতাশ।’ তিনি বাগেরহাট-২ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিও জানান।
বাগেরহাট-১ আসনের প্রার্থী কপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘আমি কখনও সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। নির্যাতিত হিন্দুদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেই ছবিগুলো নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।’
অন্যদিকে বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, ‘আমার মনোনয়ন পাওয়ায় চাঁদাবাজ ও জুলুমকারীরা আতঙ্কিত। আমি অতীতে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ করেছি, জেলও খেটেছি। সব জেনেই দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। নির্বাচিত হলে এলাকায় অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করব।’


