দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তনের আলোচনা চললেও তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো রদবদল নয়—এই বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন হচ্ছে—এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।”
এর ফলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম (Jahangir Alam) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বহাল থাকছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান (Khalilur Rahman) তাঁর বর্তমান দায়িত্বে থাকছেন, এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদেও কোনো পরিবর্তন আসছে না।
গুঞ্জন আর বাস্তবতার ফারাক
গত সোমবার থেকে খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে খবর আসে। ধারণা করা হচ্ছিল, হাদির হ’\ত্যা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতির দায়ে জাহাঙ্গীর আলমকে সরিয়ে নতুন মুখ আনতে যাচ্ছে সরকার।
তবে মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের রদবদল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক উপদেষ্টা।
দলগুলোর আপত্তি ও ভেতরের মতানৈক্য
উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা এবং বিশেষ সহকারী জানিয়েছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হ’\ত্যাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষুব্ধ ছাত্র সংগঠনগুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে হ’\ত্যাকারীরা ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্বে আনার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি রয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) নেতা জানান, “সরকারকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে—খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী ও সংস্থাগুলো তাঁর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “তাঁকে দায়িত্ব দিলে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সহযোগিতা করবে না, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”
সরকার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, গত মে মাসে বিএনপি খলিলুর রহমানের পদত্যাগ চেয়ে লিখিত দাবি দিলেও পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর সঙ্গে লন্ডনে বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়। তবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আপত্তির কারণে বিএনপিও তাঁকে স্বরাষ্ট্রে দেখতে চায় না।
আইজিপি পরিবর্তন হচ্ছে না
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হ’\ত্যার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। পুলিশ এখনও পুরোপুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। দীর্ঘ ১৬ মাসেও পুলিশের কাঠামোগত সংস্কার হয়নি—মনোবল দুর্বল, প্রতিক্রিয়া সীমিত।
এই প্রেক্ষাপটে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আইজিপি বাহারুল আলম (Baharul Alam)-কে সরানোর আলোচনা চললেও জনপ্রশাসন বিভাগ এই মুহূর্তে রদবদলের বিপক্ষে মত দিয়েছে। তাদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে এমন পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
একজন বিশেষ সহকারী বলেন, “ছাত্রনেতৃত্ব যদি পুলিশে পরিবর্তনের দাবিতে সরব হয়, তাহলে প্রশাসনের আরও পরিবর্তনের দাবি উঠতে পারে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে।”
অনির্ধারিত বৈঠকে নিরাপত্তা অগ্রাধিকার
আজকের একনেক বৈঠক শেষে অনির্ধারিত উপদেষ্টা বৈঠকে আসন্ন বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ এবং তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে মত দেন উপদেষ্টারা।
তবে শহীদ ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির হ’\ত্যা, গোয়েন্দা সংস্থার অগ্রগতি ও পুলিশি তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগও উঠে আসে আলোচনায়।
সব মিলিয়ে এখনই উপদেষ্টা পরিষদে বড় কোনো রদবদলের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চাপ যেভাবে জমা হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে পারে—এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


