জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizen Party) মধ্যকার নির্বাচনী সমঝোতার আওতায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব পেলেও সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম। রোববার রাতে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি এই এনসিপির অংশ হচ্ছি না।”
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপি ও জামায়াতের যৌথ অংশগ্রহণের ঘোষণা আসে রোববার সন্ধ্যায়। কিন্তু সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় থাকা এক মুখ মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, এই সিদ্ধান্তে তিনি যুক্ত নন।
মাহফুজ আলম বলেন, তাঁকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেটি অস্বীকার করেন না। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তার ভাষায়, “ঢাকার কোনো একটা আসনে জামায়াত-এনসিপি জোটের প্রার্থী হওয়ার চাইতে আমার লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির ছাত্রনেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মাহফুজ আলম আরও জানান, গত দেড় বছর তিনি নাগরিক কমিটি ও এনসিপিকে নীতিগত সহায়তা দিয়ে এসেছেন, কারণ সংগঠন দুটিতে তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন। তবে এখনকার বাস্তবতায় সেই সম্পর্ক আর টিকছে না।
তিনি লিখেছেন, “আমার জুলাই সহযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান, স্নেহ ও বন্ধুত্ব মুছে যাবে না। কিন্তু আমি এ এনসিপির অংশ হচ্ছি না।”
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার সমালোচনায় মাহফুজ আরও বলেন, “আমি নূতন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক লড়াই, সামাজিক ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা, রিকনসিলিয়েশন, দায়-দরদের সমাজের কথা বলেছি। আমার সহযোদ্ধারা বারবার সেই কথাগুলো বলেছেন, কিন্তু তারা তা ধারণ করতেন?”
এনসিপিকে ‘বিগ জুলাই আম্ব্রেলা’ হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বলেও জানান মাহফুজ, তবে সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি নানা কারণে।
বাংলাদেশ যে বর্তমানে এক ‘শীতল যুদ্ধের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেটি উল্লেখ করে মাহফুজ বলেন, “এই পর্বে কোনো পক্ষ না নিয়ে নিজেদের বক্তব্য ও নীতিতে অটল থাকাই শ্রেয়।”
সাংবাদিকদের ভাষায়, তাঁর এই অবস্থান প্রমাণ করে বিকল্প বা মধ্যপন্থী রাজনীতির পথ এখনো খোলা আছে। মাহফুজ আলমও সে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “বিকল্প তরুণ/জুলাই শক্তির সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। বরং আমি গত দেড় বছরে যা বলেছি, যে নীতিতে বিশ্বাস রেখেছি, তা অব্যাহত রাখব—রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সকল উপায়ে।”
শেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত সম্ভব ও বাস্তব। কেউ আমার সঙ্গে থাকলে স্বাগত জানাব। বিকল্প ও মধ্যপন্থী তরুণ/জুলাই শক্তির উত্থান অত্যাসন্ন।”


