লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ জামায়াতের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটে যোগ দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির সদ্য সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান বিএনপি নেতা ড. রেদোয়ান আহমেদ।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এতবারপুরে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “ক্ষমতার মোহে বীরত্বের জলাঞ্জলি দিয়েছেন খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা। সারা জীবন তিনি জামায়াতে ইসলামীর তীব্র সমালোচক ছিলেন, অথচ এখন তাদের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছেন।”
এর আগে বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোটে এলডিপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যোগ দিয়ে ১০ দলীয় জোটে রূপ নেয়। এই জোটের ঘোষণা দেয়ার সময় মঞ্চে ছিলেন কর্নেল অলি আহমেদও।
রেদোয়ান আহমেদ জানান, কর্নেল অলির এই সিদ্ধান্তে তিনি শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম এককভাবে নির্বাচন করতে। কিন্তু কর্নেল অলি সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ফলে আমি বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিতে ২৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিই।”
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা রেদোয়ান আহমেদ আরও বলেন, “কর্নেল অলি আহমেদ মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন। তিনি বীর বিক্রম খেতাব পেয়েছেন—এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু এখন যে দল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠন করেছেন—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নীতির পরিপন্থী।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এলডিপি–জামায়াত জোট গঠনের এই সিদ্ধান্তে দলটির অভ্যন্তরে আদর্শগত ফাটল আরও গভীর হলো। রেদোয়ান আহমেদের মতো দীর্ঘদিনের সঙ্গী ও সাবেক মহাসচিবের এমন প্রকাশ্য সমালোচনা সেই সংকটকে প্রকাশ্যে এনে দিল।
উল্লেখ্য এক সময় বিএনপির ডাকসাইটে নেতা ছিলেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। বিএনপি সরকার গঠন করলে একাধিকবার মন্ত্রীও হয়েছিলেন।
কিন্তু ২০০৬ সালে জামায়াতের সাথে বিএনপি’র সখ্যতার বিরোধিতা করে দল ছেড়ে যান এ প্রবীণ রাজনীতিক। পরবর্তীতে বিএনপি জোটের শরিক হলেও দলটির সঙ্গে মান-অভিমানের পুরোপুরি নিরসন হয়নি। আর এবার যে কারনে তিনি বিএনপি ছেড়েছিলেন সেই দলের জোটেই যোগদান করেলন এই প্রবীণ নেতা। ক্ষমতার লোভ মানুষকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করতে পারে – এটাকে তারই একটা নমুনা বলে মনে করেছেন অনেকে।


