জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেরি করার অভিযোগে বরগুনার পাথরঘাটায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party—BNP)-এর নেতাকর্মীরা। সোমবার বিকেলে পাথরঘাটা উপজেলা (Patharghata Upazila) পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা) আসনের বিএনপি প্রার্থী নুর ইসলাম মনি এবং ইউএনও ইসরাত জাহানের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি পরবর্তীতে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, উভয় পক্ষ থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে।
প্রার্থী নুর ইসলাম মনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা আড়াইটার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ইউএনওর কার্যালয়ে যান। কিন্তু সে সময় ইউএনও শৌচাগারে ঢুকে পড়েন এবং সেখানে আধাঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করেন। পরে ইউএনও কক্ষ থেকে বের হয়ে দাবি করেন, নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি লোক কক্ষে প্রবেশ করেছে—এই অজুহাতে তিনি মনোনয়নপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এতে নিজেকে অপমানিত মনে করে মনি মনোনয়নপত্র জমা না দিয়েই নিচে নেমে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনি নিচে নামার পর সেখানে অপেক্ষমাণ বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা একপর্যায়ে ইউএনওর কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং তাকে ঘিরে অবস্থান নেন। এ সময় ইউএনওর সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয় এবং তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন এবং পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সবশেষে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নুর ইসলাম মনি পুনরায় এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ ঘটনার পর মনি অভিযোগ করেন, ইউএনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এই ইউএনওকে অবিলম্বে অপসারণ করা উচিত।
তবে ইউএনও ইসরাত জাহান অভিযোগগুলো অস্বীকার করে ভিন্ন বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি তার কক্ষেই বসা ছিলেন। তখন প্রার্থী নুর ইসলাম মনি শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করেন। প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী তিনি নিচতলায় নেতাকর্মীদের রেখে সাত থেকে আটজনকে সঙ্গে নিয়ে কক্ষে আসেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র আনতে দেরি হওয়ায় তাকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় পাঁচজনের বেশি লোক কক্ষে না রাখার অনুরোধ জানানো হলে প্রার্থী মনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং পরে শত শত লোক নিয়ে সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটান। ইউএনওর দাবি, তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাথরঘাটায় নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক ভূমিকা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।


