ভারতীয় এক কূটনীতিকের সঙ্গে ‘গোপন’ বৈঠকের কথা প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) আমির শফিকুর রহমান। সম্প্রতি রয়টার্স (Reuters)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বৈঠকটি এই বছরের শুরুতে হয় এবং ভারতীয় ওই কূটনীতিক নিজেই বিষয়টি গোপন রাখতে অনুরোধ করেছিলেন।
শফিকুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, এই বৈঠকটি ছিল বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে আলোচনার অংশ। তাঁর মতে, নির্বাচনের পর একটি ‘জাতীয় ঐক্যের সরকার’ গঠন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, “আমরা চাই সব দল মিলে একটি স্থিতিশীল সরকার পরিচালনা করুক, যার মূল লক্ষ্য হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া।”
রয়টার্স তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আজ বুধবার। এতে বলা হয়, ১৭ বছর পর নির্বাচনী রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দেওয়া জামায়াত দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, জামায়াত এখনো বিএনপির পর দেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অবস্থান করছে।
প্রসঙ্গত, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরিক ছিল জামায়াত। বর্তমানে তারা নবীন প্রজন্মের রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে জোটে যাচ্ছে। এই নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা ইতোমধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সাক্ষাৎকারে শফিকুর রহমান বলেন, “নতুন সরকার গঠন করতে পারে—এমন দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অংশ হিসেবে একজন ভারতীয় কূটনীতিক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “যদিও অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা প্রকাশ্যে দেখা করেন, ভারতীয় ওই কর্মকর্তা অনুরোধ করেছিলেন যেন বৈঠকটি প্রকাশ না করা হয়। তাই এতদিন বিষয়টি জানানো হয়নি।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়েও তিনি নমনীয় অবস্থান প্রকাশ করেন। শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের খোলামেলা হতে হবে। সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।”
এই সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় রয়টার্স ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদিও তারা সরাসরি মন্তব্য করেনি, দিল্লির একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
শফিকুর রহমান নির্বাচনের পর কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, সেখান থেকেই প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবেন।” জামায়াত যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না—এমন প্রশ্নে বলেন, সিদ্ধান্ত দল নেবে।
বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা মো. সাহাবুদ্দিন (Mohammad Shahabuddin) সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, “জামায়াতকে অন্তর্ভুক্ত করে কোনো সরকার গঠিত হলে আমরা বর্তমান রাষ্ট্রপতির অধীনে কাজ করতে স্বস্তিবোধ করবো না।”
এ বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু বলেন, “আমি বিষয়টি আর জটিল করতে চাই না।”
সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত কোনো নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকতে চায় না; বরং সবার সঙ্গে ‘ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক’ বজায় রাখাই তাদের কৌশল।


