জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নয় দফার প্রবর্তক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে লিখেন, ক্যাম্পাসসহ সকল মিডিয়া প্রতিনিধিরা জানে নয় দফার বিস্তারিত। প্রচারের ক্ষেত্রে শিবিরের অবশ্যই অবদান আছে, সেটা অস্বীকার করি নাই। কিন্তু এইভাবে পুরা ইতিহাস পরিবর্তনের নোংরা খেলায় শিবির মাতলো কেন? আবু সাঈদ সহ ৫ জন শহীদ হওয়ার পর ১৬ জুলাই রাতে আমরা অনলাইন মিটং করে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সামনের পরিকল্পনা ঠিক করি, একই সাথে সরকারের সংলাপের আহবানের প্রেক্ষিতে কিছু দাবিদাওয়া ঠিক করি। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতির কারণে সেগুলা ফরমালি উপস্থাপন করা হয়নি। যখনি সিনিয়র কারো সসন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, পরিস্থিতি বেগতিক, শিবিরের পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হলে, আমি আমাদের পূর্বের সেই রাতের দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে ফরমালি কিছু দাবি দিতে সম্মত হই। Ezoic
নয় দফা দেওয়ার সময় শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সেক্রেটারির সাথে ঘন্টা দুয়েকের মতো আলাপ-আলোচনা হয়, অনেক বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষে ফাইনাল করা হয় এবং ঐ দিন রাত ১২ টা পর্যন্ত সব সাংবাদিককে আমি ম্যাসেজ করে, ফোন দিয়ে ৯ দফা পৌঁছে দিছি। আমার কাছে ক্যাম্পাসের সব সাংবাদিকের নাম্বার ছিল, সবার কাছে পৌঁছে দিছি।
ইন্টারনেট ডাউন করে দেয়ার কারণে সীম থেকেও ম্যাসেজ ডেলিভারি হইতো না, এক দফা এক দফা করে পাঠিয়েছি, ফোন দিয়ে আমি মুখে দফাগুলো বলছি, সাংবাদিকরা লিখে নিছে, রেকোর্ড করে নিছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নাম্বার আমার কাছে ছিল না, ওরা আমাকে নাম্বার পাঠাইছে, আমি এক এক করে সবাইকে ম্যাসেজ দিছি। তারপর ফোন দিয়ে কনফার্ম করছি, এটা যে আমি আব্দুল কাদের। তখন স্বাভাবিকভাবেই চাপ ছিল, আর সাংবাদিকরা তো কনফার্ম না হওয়া ছাড়া কোনোকিছু ছাপাবে না। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা বাসা থেকে বের হয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া নাম্বার অন করতাম, সবাইকে কর্মসূচি পাঠাইতাম, এইভাবে চলতো থাকতো রাত ১১-১২ টা পর্যন্ত। এটা শুরুর দিকের কথা। কর্মসূচি আলাপ আলোচনা করেই ঠিক হইতো। সাদিক ভাই আমাকে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের কন্টাক্ট নাম্বার দিতো, তাদেরকে আমি ফোন দিয়ে রিকুয়েষ্ট করতাম, নয় দফাটা আমার পক্ষ থেকে যাচ্ছে, আমি আব্দুল কাদের, আপনারা এটা নিয়ে একটু লেখেন…
শিবির প্রথম দফা দাবি দিয়েছিল, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আমি ওই পরিস্থিতি এবং সময়ের আলোকে সেটাকে সুইটেবল মনে করি নাই, এইভাবে সরাসরি ছাত্রদের পক্ষ থেকে পদত্যাগের দাবি ঐ সময়ে উঠা সমীচীন মনে হয়নি আমার কাছে। কিন্ত শিবির নিজেদের অবস্থানে অনড়। একইভাবে আমিও। পরবর্তী আলাপ আলোচনা শেষে পরিবর্তিত রূপ আসে। শিবির ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দিয়েছিল, আমি শক্তভাবে অপোজ করছি, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কাদের লাভ, সেটা তো আমি জানি। তারা এই দাবীতেও গোঁ ধরে ছিলেন। পরে আমার শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী আসে। এই দুইটাই তো মেইন। বাকি দাবীগুলা কমন দাবি ছিল সবার, অনলাইনেও মানুষজন লেখালেখি করেছিল এমন দাবি নিয়ে।
অগাস্টের কিছুদিন পরে ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক ভাই আমাকে গভীর রাতে অনেকবার ফোন দিলো, দেখা করতেই হবে। ভোর রাতের দিকে দেখা করলাম ভিসি চত্তরে, ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ হইলো, একটাই কথা তার- তাঁদের সম্পর্কে আমি যেনো কিছু লিখি। তারা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কোথাও এক্সেস পাচ্ছে না। আমি না লিখলে হবে না।
আমি লিখলাম, ইতিহাসের কাছে আমি দায়বদ্ধ থাকতে চাই না, কারো অবদানকে অস্বীকার করলে আমি ইহকাল এবং পরকালে দায়ী থাকবো। যেহেতু আমি অনেক কিছু জানি, অনেককিছুর অংশ ছিলাম, আল্লাহ সুযোগ করে দিছে। জাগতিক পাওয়া না পাওয়া ঊর্ধ্বে গিয়ে অনেকে “না” করা সত্ত্বেও লিখলাম। আমার লেখার পরে শিবিরের আলাপ সামনে আসে। শিবির বিভিন্ন জায়গায় দর কষাকষির সুযোগ পায়। কিন্তু বিনিময়ে শিবির কি করলো? আমাকে কখন কোথায় নাস্তা খাওয়াইছে, কখন গেঞ্জি কিনে দিছে সেটা প্রচার করতে লাগলো। নয় দফা নিয়ে তারা পুরা ইতিহাস-ই চেঞ্জ করে দিল!

শেখ হাসিনার পতন না হলে আমি আব্দুল কাদেরের কল্লা যাইতো, শিবিরের সাদিক-ফরহাদসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডার দাবীদারদের কিছুই হইতো না। কারণ, তারা তো সবাই অদৃশ্য,আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের-ই হইতো না, ইভেন ফেসবুকেও একটা অক্ষর লিখে নাই। বলি হইলে আমি হইতাম। হাসিনা ৩ জনকে পদ্মায় ডেকে নিয়ে ৮ দফা দিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার চক পুরাপুরি ফাইনাল করে ফেলছিল, সেই পরিস্থিতি নয় দফা দিয়ে হাসিনার পুরা গেইম প্ল্যান ভেঙ্গে দিলাম। আসিফ ভাই দুইবার ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাইছে, ছাড়া পাওয়া মাত্রই আমাকে ফোন দিছে, বারবার করে হুশিয়ার করে দিছে, সাবধানে থাকতে, আমাকে পাইলেই মেরে ফেলবে।
জীবন বাজি রেখে সাত-পাঁচ না ভেবে আন্দোলনের ক্রুশিয়াল মোমেন্টে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলাম আর এখন এসব দেখা লাগতেছে!