জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে কোনো ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ধামরাই পৌরসভার যাত্রাবাড়ী মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশবাসী স্থানীয় সরকার নির্বাচন মেনে নেবে না, বিএনপিও তা হতে দেবে না। বিএনপি গত ১৫ বছর যাবৎ সকল ধরনের হত্যা, গুম, নির্যাতন ও হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছে এবং এখনো আছে। দেশের জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত, একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথেই থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছে, তা গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমাদের নেতাকর্মীদের গুম, হত্যা ও পঙ্গুত্ববরণের শিকার হতে হয়েছে। এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। খালেদা জিয়াকেও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে ছয় বছর বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তিনি কারাগারে এবং গৃহবন্দি অবস্থায় দীর্ঘদিন দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছেন। ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের ফলেই তিনি মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালীন তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।”
তারেক রহমান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ৮৩টি মামলা দিয়ে নির্বাসনে রাখা হয়েছে, যা এখনও শেষ হয়নি। বিএনপির নেতাকর্মীদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়া কখনো আপস করেননি। বিএনপিকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও আলেম-ওলামারাও সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের শিকার হয়েছে। শাপলা চত্বরে নিরীহ আলেম-ওলামাদের ওপর হামলা ও হত্যা, এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাগুলো জাতি ভুলে যায়নি।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে সরকার গঠন করা হয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, তাঁর নেতৃত্বে এই সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করি, তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবেন।”
পরিশেষে তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলেন, “দেশকে আর ধ্বংস ও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না। কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা পরিহার করা উচিত।”