কুমিল্লায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নেপালে জিম্মি করে ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি আশেক এলাহী (Ashek Elahi), যিনি জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) সমর্থক বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিবরণ
ভুক্তভোগী তারেক আজিজ (Tareq Aziz) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের খানাতুয়া গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত আশেক এলাহী একই উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের মৃত ইছহাক মিয়ার ছেলে। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক এবং কুমিল্লা পশ্চিম অঞ্চলের ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি।
শনিবার (১ মার্চ) কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার এ অভিযোগ উত্থাপন করে। সংবাদ সম্মেলনে তারেক আজিজ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং তার বাবা কামাল হোসেন ও চাচা জসীম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
প্রতারণার কৌশল
তারেক আজিজের অভিযোগ অনুযায়ী, আশেক এলাহী ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর তার বাবাকে প্রস্তাব দেন যে, তারেককে সহজ রুটে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সম্ভব। এজন্য ৪৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বৈধ উপায়ে নেপালে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে BFS-এর মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করে ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করানো হবে।
তারেকের বাবা আশেক এলাহীর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রস্তাবে রাজি হন এবং ঢাকার ফার্মগেট এলাকার টুরিজম এইড লিমিটেড নামক একটি এজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
অর্থ লেনদেন ও জিম্মি পরিস্থিতি
প্রথম দফায় ২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, তারেক মেক্সিকো পৌঁছানোর পর অবশিষ্ট ৪৩ লাখ টাকা মধ্যস্থতাকারী রেজাউল করিম রতনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর তারেককে নেপালে পাঠানো হলে, তাকে কাঠমাণ্ডুর একটি গুদামে আটকে রাখা হয়। সেখানে তার মোবাইল ফোন, পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে বাধ্য করা হয় মিথ্যা ভয়েস রেকর্ড পাঠাতে, যাতে তিনি বলেন যে তিনি মেক্সিকো পৌঁছেছেন। তারেকের বাবা সেই ভয়েস রেকর্ড শুনে চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট ৪৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
পরবর্তীতে, চক্রটি তারেককে চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে করে একটি রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে নেপাল পুলিশের সহায়তায় ২৩ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

আইনি পদক্ষেপ
পরবর্তী সময়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আশেক এলাহী ক্ষতিপূরণসহ ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধ করবেন বলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন। তবে, এখন পর্যন্ত তিনি কোনো অর্থ ফেরত দেননি এবং উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন।
২০২৪ সালের ৯ মে ঢাকার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর আদালত আশেক এলাহীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতা হাফেজ মো. নুরুন্নবী জানান, আশেক এলাহী একসময় শিবিরের নেতা ছিলেন, তবে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর থেকে তিনি আর দলীয় কোনো পদে নেই।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মশিউর রহমান বলেন, “আমি দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।”