একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি (National Citizen Party-NCP)। দলটির নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছিলেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যমান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক দলে রূপান্তর
আন্দোলনভিত্তিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করতে গঠন করা হয়েছিল। এ সংগঠনের ব্যানারে পরিচালিত কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল সকল রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। দলীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে থেকেই এনসিপি নেতারা নির্বাচনী কৌশল ও জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
বিএনপি (BNP) ও অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ
আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর জানা গেছে, এনসিপি বর্তমানে চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি (BNP), এবি পার্টি (AB Party), এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজিপি) (Bangladesh National Party-BJP)। চতুর্থ দলের নাম এখনো নিশ্চিত নয়। দল গঠনের আগ থেকেই এনসিপি নেতারা নির্বাচনী জোট গঠনের লক্ষ্যে সক্রিয় ছিলেন।
জামায়াতের (Jamaat) ভূমিকা ও কৌশল
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) এনসিপির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াত এনসিপিকে তাদের নির্বাচনী জোটের অংশ হিসেবে দেখতে চায় এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী দলসহ বৃহত্তর জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে। তবে এনসিপির একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি জোট গঠনে অনাগ্রহী এবং বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সমঝোতার দিকে ঝুঁকছে।
আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা
প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের ক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছিল শতাধিক আসনের জন্য। তবে বিএনপি শুরুতে মাত্র ৫-৭টি আসন ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে ২০-২৫টি আসনে উন্নীত হতে পারে বলে জানা গেছে। জামায়াতও নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী নতুন জোট গঠনের চিন্তা করছে, যেখানে এনসিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি এখন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং খুব শিগগিরই প্রতীক চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করছে। দলটির এক নেতা জানান, নির্বাচন হতে এখনো সময় বাকি, তাই জোট গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। যখন নির্বাচন ঘোষণা করা হবে, তখন দেখা যাবে কে কোন জোটে যাচ্ছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা ও নির্বাচন
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Professor Dr. Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার গঠনের পর থেকে তারা বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখছে। সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।