চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে সরকার ব্যয় করেছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার বেশি। তবে এই বিশাল ব্যয়ের বিনিময়ে জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কতটুকু সাফল্য এসেছে, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে।
অপরাধ বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
রাজধানী ঢাকা, পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো বড় শহরগুলোতে খুন, অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে, কারণ তারা এখনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
জনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয়ের বিবরণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় ছিল ৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
- চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে মোট ব্যয় ছিল ২৫ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরও আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি ঠেকানো যায়নি।
গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের কার্যক্রমে স্থবিরতা
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তিন দিন পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ কর্মস্থলে ফিরে এলেও তারা টহল বা চেকপোস্ট কার্যক্রম চালাতে পারেনি।
মূলত সেনাবাহিনীই সীমিত লোকবল দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ব্যয় বৃদ্ধির পরও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
অপরাধ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
- আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে খুন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে মোট ৫,৮৬২টি।
- অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩২৯টি।
- খুনের ঘটনা ঘটেছে ১,৫৪৫টি।
- চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৩,১৫৩ ও ৬২৩টি।
- দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ১৯২টি।
ডিসেম্বরের পর গত দুই মাসেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। প্রতিদিনই ছিনতাই, চুরি ও মব জাস্টিসের মতো ঘটনা ঘটছে।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাহিনীর সদস্যরা সচেষ্ট।
“পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে টহল ও তল্লাশিচৌকির কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অপরাধের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও সীমিত কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়, বরং কার্যকর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং বাস্তবসম্মত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।