রাজধানীর গুলশান (Gulshan)-এর অভিজাত এলাকায় অবস্থিত একটি বাড়িতে মধ্যরাতে গেট টপকে এবং দরজা ভেঙে তল্লাশি চালিয়েছে একদল ব্যক্তি। তারা দাবি করেছে, এটি প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম (Tanvir Imam)-এর বাড়ি।
ছাত্র-জনতার নামে হামলা ও তল্লাশি
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে গুলশান-২-এর ৮১ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ‘ছাত্র-জনতা’ সেখানে তল্লাশি চালাবে।
ঘোষণায় দাবি করা হয়:
- বাড়িটিতে অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ টাকা রয়েছে।
- ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারীরা সেখানে লুকিয়ে আছে।
এরপর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন পার্কের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জড়ো হয়। রাত ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়।

গেট টপকে তল্লাশি, বাড়ি তছনছ
- বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী বাধা দিলে কিছু লোক গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে।
- পরে গেট খুলে দিলে শতাধিক ব্যক্তি বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে।
- তারা প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালায়, লাগেজ, ড্রয়ার ও সিন্দুক খোলে।
ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
পুলিশের ভূমিকা ও নীরবতা
- শুরুতে গুলশান থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফোন ধরেননি।
- ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
- পরে রাত ২টার দিকে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান (Mokhlesur Rahman) বলেন,
“এটি তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাড়ি। তাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে ২০-২৫ বছর আগে। অভিযোগের ভিত্তিতে ছাত্র পরিচয়ে কিছু লোক মিছিল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমরা ধারণা করছি, এর সঙ্গে কিছু অছাত্রও ছিল।”
- তিনি আরও জানান,
“আমরা যখন ১২টা-সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসি, তখন তারা চলে যাচ্ছিল। বাড়িটি সম্পূর্ণ তছনছ করা হয়েছে। এখন মালিকের সঙ্গে কথা বলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।”
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি, কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
- গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন (Md. Al Amin Hossain) জানান,
“লোকজন অভিযোগ তোলে যে, বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর লুকিয়ে আছে এবং সেখানে টাকা ও অস্ত্র মজুদ রয়েছে। এরপর তারা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।”
- এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাসায় তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি।”
- ঘটনার সময় তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না, তবে কেয়ারটেকারসহ তিনজন সেখানে ছিলেন।
- তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি, তবে পুরো বাড়ি তছনছ করা হয়েছে।
- হামলায় জড়িতদের মধ্যে কাউকেই আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
নিরাপত্তাহীনতা ও পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা
এই ঘটনার পর রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
- প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে শতাধিক লোক প্রকাশ্যে একটি বাড়িতে হামলা চালাল এবং পুলিশ তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলো?
- ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ উপস্থিত হলেও কেউ আটক হয়নি, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।