ভুয়া পরিচয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় পদে মালেকা

সিলেটের মালেকা খাতুন সারা (Maleka Khatun Sara)-র বিরুদ্ধে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি (SUST))-এর শিক্ষার্থী পরিচয় ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়েও তিনি নিজেকে শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (Bangladesh Democratic Student Council)-এর বিভিন্ন পদ দখল করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভিন্ন পরিচয়ে পদ লাভের অভিযোগ

জানা যায়, ২০২১ সালে মালেকা খাতুন (Maleka Khatun) সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ (Sylhet Government Women’s College)- থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি শাবিপ্রবিতে ভর্তি হলেও তা বাতিল হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে, বিভিন্ন সময় তিনি নিজেকে শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগ (Department of Public Administration)-এর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও যাতায়াত করেছেন।

এছাড়া, তিনি কখনো সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ-এর শিক্ষার্থী, আবার কখনো বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ (Department of Biochemistry and Molecular Biology) বা বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ (Department of Forestry and Environmental Science)-এর শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছেন। এমনকি তিনি কখনো কখনো নিজের নাম পরিবর্তন করে সুরাইয়া সারারুবাইয়াত তৃণা নামেও পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

শাবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রবিউল ইসলাম মামুন বলেন,
“শুনেছি, মালেকা খাতুন শাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়েছিল। তবে তার ভর্তি অনেক আগেই বাতিল হয়েছে। তাই তিনি নিজেকে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী বলে দাবি করতে পারেন না।”

সংগঠনের সাবেক সহসমন্বয়ক আজাদ শিকদার জানান,
“মালেকা খাতুন আন্দোলনের সময় শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী পরিচয় দিতেন এবং সংগঠনের কমিটিতে ছিলেন। তবে আন্দোলনের পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। কিন্তু এরপরও তিনি শাবিপ্রবির পরিচয় ব্যবহার করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ গ্রহণ করেন, যা স্পষ্টতই মিথ্যাচার।”

শাবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party)-এর উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন,
“আন্দোলনের সময় আমরা তার প্রকৃত পরিচয় জানতাম না। তখন আন্দোলনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে ছিল। পরবর্তীতে জানতে পারি, তিনি আসলে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী নন।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

লোকপ্রশাসন বিভাগ (Department of Public Administration)-এর একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা মালেকা খাতুনকে কখনো ক্লাসে বা বিভাগের আশপাশে দেখেননি। বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হেলাল খান বলেন,
“আন্দোলনের সময় তিনি নিজেকে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেন, কিন্তু আমরা তাকে কখনো ক্লাসে বা বিভাগের আশপাশে দেখিনি।”

বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ সিদ্দিকী জানান,
“অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে যে, মালেকা খাতুন আমাদের বিভাগের আইডি কার্ড ব্যবহার করে নিজেকে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর আমি তাকে সতর্ক করি এবং এ ধরনের কাজ বন্ধ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিই।”

এ ঘটনায় শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *