কিছু উপদেষ্টার বিএনপির নাম শুনলে আর নির্বাচনের কথা বললেই গায়ে জ্বালা ধরে

বিএনপির (BNP) কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির (Dhaka Metropolitan North BNP) আহ্বায়ক আমিনুল হক (Aminul Haque) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা বিএনপির নাম শুনলে ও নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই অস্বস্তিতে ভোগেন। তারা নির্বাচনকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না।

রোববার রাজধানীর মিরপুরের ইবরাহীমপুর দরুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর কাফরুল থানা বিএনপির কর্মিসভা ও রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা

বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৭ বছর ধরে দলটি আন্দোলন করে আসছে জনগণের ভোটাধিকার ও একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও স্বৈরাচারের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচনে যাবেন না।

তিনি আরও বলেন, “স্বৈরাচার শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তার দোসরদের বিচার দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষ চায়, আমরাও চাই। তবে স্বৈরাচারের বিচার এবং নির্বাচনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার।”

নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

আমিনুল হক বলেন, “শেখ হাসিনা ও তার অনুসারীরা গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে নিপীড়ন চালিয়েছেন, তার বিচার জনগণের নির্বাচিত সরকারই করবে। তবে বিচার ও সংস্কারের নামে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর নেতৃত্বে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা হবে। জনগণের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করা হবে। এজন্যই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য ৩১ দফার রূপরেখা দিয়েছেন।”

অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ

অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে আমিনুল হক বলেন, “গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দেশে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, খুন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাস বেড়েছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বিদেশি শক্তির মদদে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।”

কাফরুল থানা বিএনপির কর্মিসভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ

কাফরুল থানা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ একরাম হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল হক আকরাম ও সাব্বির দেওয়ান জনির সঞ্চালনায় কর্মিসভায় আরও বক্তব্য দেন:

  • বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন হাসান, তারিকুল আলম তেনজিং
  • ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মো. মোস্তফা জামান
  • মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি
  • যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ

আমিনুল হক তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চলবে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি আপসহীন থাকবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *