জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি | NCP) যুগ্ম সদস্যসচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি | NCTB) পাঠ্যবই ছাপার কাগজ কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে।
একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর থেকে নেটিজেনরা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন।
গণ অধিকার পরিষদের নেতার অভিযোগ
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান সোমবার (১০ মার্চ) ফেসবুকে লিখেছেন, “ডিসি নিয়োগ তালিকায় ছাত্র সমন্বয়কের নাম এসেছিল গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের। এনসিটিবির দুর্নীতির ঘটনায় তাঁর নাম নতুন করে আলোচনায় এসেছে। পাঠ্যবই ছাপার কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫-২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনলে বই ছাপার অনুমোদন মেলেনি। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য হয়েছে, যার সঙ্গে এনসিটিবির কিছু কর্মকর্তা ও তানভীর জড়িত।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জানতে পেরেছি, নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলেও তাঁর অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। সাংবাদিকদের বলছি, তানভীর সম্পর্কে আরও অনুসন্ধান করুন, অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
ডিসি নিয়োগ ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ
রাশেদ খান আরও বলেন, “ডিসি নিয়োগের ঘটনায় তানভীরের সম্পৃক্ততার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছিল। তাঁকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি কাজ করিয়েছেন। নতুন দল এনসিপি, দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার উচিত তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা।”
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে তানভীরের অতীত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও আলোচনা চলছে। এক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, তিনি ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন এবং পরবর্তীতে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
দেলোয়ার হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, “নাহিদ সারজিসদের নতুন দরবেশ বাজারে আসছে। এই তানভীর ছাত্রজীবনে শিবির করতেন,পরবর্তীতে জামায়াতপন্থি ছিলেন। এখন তিনি নাহিদ ইসলাম দের নতুন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব।
কারা জানি ছাত্রদের নতুন দল নিয়ে দালালি করেন সারাদিন?? জায়গা থেকে আওয়াজ দিয়েন।
৪০০ কোটি অথবা মৃত্যু– Md Sarjis Alam। বেশি না সারজিস মাত্র ৪০০ কোটি টাকা।”
এবি জুবায়ের নামের এক ঢাবি শিক্ষার্থী লিখেছেন, ভদ্রলোকের নাম গাজী সালাউদ্দীন তানভীর। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব। আগেও নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলার ডিসি নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য ইত্যাদি করে সচিবালয়ে ধরা পড়েছিলেন।
ইস্ট মিনিস্টার সোসাইটি বাংলাদেশ পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এই গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর ওরফে সমন্বয়ক তানভীর এর নাম মনে আছে? এই লোকটা হাতেনাতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের এক যুগ্ম সচিবের রুমে ধরা খেয়েছিলো ডিসি নিয়োগ বাণিজ্যের সময় এবং ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স দেখে অনেকে হাসিঠাট্টা করে উড়িয়ে দিয়েছিল যে, সে ছাত্র হয় কীভাবে ও ভুয়া সমন্বয়ক বলে। এটা বলেও ট্রল হয়েছিল, যুগ্ম সচিব বিশ্বাস করল কীভাবে! আজকে সে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব। তাহলে নিশ্চয়ই সেই যুগ্ম সচিব চিনতে ভুল করেননি। তিনি সঠিকই ধরতে পেরেছিলেন।’
এনসিটিবির টাকা লোপাটের বিষয়ে প্রতিবেদনকে ইঙ্গিত করে সারজিস আলম এক পোস্টে রাখাল রাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানালেও সেখানে সালাহউদ্দিনকে নিয়ে কিছু বলেননি। সারজিসের ওই পোস্টের স্ক্রিনশটসহ এক পোস্টে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ লিখেছেন, ‘রাখাল রাহাকে যারা চেনেন, তারা দুর্নীতি বিষয়ে এই সব ফালতু অভিযোগের ন্যূনতম পাত্তা দেবে না। এই ছেলে যখন ছাত্রলীগের হয়ে মাঠ কাঁপাতো, রাখালদা তখন হাসিনার শিক্ষানীতির বিপদ নিয়ে অল্প কয়েকজন লোকের সাথে বিপদজনক সব কর্মসূচি পালন করেছে। এই ছেলে যখন ৮ দফা দিয়ে বেড়াচ্ছে, রাখালদা তখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ করেছে বন্ধুদের নিয়ে।’
তানভীরের প্রতিক্রিয়া ও আত্মপক্ষ সমর্থন
গাজী সালাউদ্দিন তানভীর নিজ ফেসবুক পেজে দুটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ডিজিএফআই, এনএসআই তদন্ত করুক। যদি এক টাকারও সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়, আমি শাস্তি মাথা পেতে নেব। অন্যথায় অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।”
তিনি দাবি করেন, “ডিসি নিয়োগের সময়ও আমাকে জড়ানো হয়েছিল, কিন্তু তদন্তে কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। আমার নাম শুধু ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”
রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড়
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টে দেখা গেছে, তানভীরের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইস্ট মিনিস্টার সোসাইটি বাংলাদেশ নামে একটি পেজ লিখেছে, “তানভীর এর আগেও ডিসি নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের রুমে হাতেনাতে ধরা পড়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। অথচ এখন তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন।”
তানভীরকে ঘিরে চলমান এই বিতর্কে এনসিপির অবস্থান কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।
এনসিপি পার্টি অফিসে নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ
উল্লেখ্য আজ নাগরিক কমিটির হল রুমে তানভীরের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় দলের নেতা-কর্মীদেরকে। এসময় তারা জানান , হয় দলে এই দরবেশ না হয় তারা থাকবে।