সাড়ে ৮১ বছরের পুরোনো দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (Bangladesh Awami League) এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখে পড়েছে। আন্দোলন দমনের নামে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গণহত্যার অভিযোগ এনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার আলোচনা চলছে।
বিশেষ করে, সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ১৪০০-এর বেশি মানুষ হত্যার অভিযোগ আসার পর এই আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী?
বিভিন্ন মহল থেকে দলটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলেও, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে নেতা-কর্মীদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, আন্তর্জাতিক মহল কী বলবে এবং দেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব কী হবে—এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মনে করেন, দলটির লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক ও শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে। গত কয়েকটি নির্বাচনে তাদের মোট ভোটের ৩০-৩৫ শতাংশ ছিল আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোট। অনেকের দাবি, শেখ হাসিনা ও তাঁর বলয়ের হাইকমান্ড একগুঁয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে যে নৃশংসতা চালিয়েছে, তার দায় তৃণমূলের কর্মীদের নয়। এমনকি, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে রাস্তায় নেমেছিলেন।
নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার বাইরে দলটির কিছু উগ্র সমর্থক সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে।
- অনেকেই মনে করেন, হাসিনার অনুপস্থিতি দেশের জন্য ভালো নয়—এটা প্রমাণ করতে কিছু উগ্র কর্মী অনলাইন ও মাঠপর্যায়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করতে পারে।
- দলটিকে নিষিদ্ধ করলে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সহিংসতা বাড়াতে পারে।
- তাছাড়া, নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের ভোটাররা ভোট বর্জন করলে, নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
নেতা-কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী?
আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যেই নিষিদ্ধ হলে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
- কেউ কেউ মনে করেন, দল নিষিদ্ধ হলেও তাঁরা কোনো ভিন্ন দলে যোগ দেবেন না, বরং পরিস্থিতি সহ্য করে টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।
- তবে কিছু সুবিধাভোগী নেতা-কর্মী কৌশলে অন্য দলে যোগ দিতে পারেন।
- দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলটির মধ্যে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী তৈরি হয়েছে, যারা নতুন সুবিধার আশায় ভিন্ন দিকে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা
দলটির অনেক নেতার দাবি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরও আওয়ামী লীগ টিকে ছিল এবং পরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই এবারও দলটি ফিরতে পারবে। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৭৫ ও ২০২৪-এর পরিস্থিতি এক নয়।
- ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী দেশ ছাড়েননি।
- কিন্তু এবার, দলের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
- দুর্নীতি, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ দলটির জনপ্রিয়তাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যে ভোটব্যাংক ছিল, সেটি এখন অনেকটাই দুর্বল।
- ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের অনীহা দেখা গেছে।
- ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগের কারণে দলটির জনপ্রিয়তা আরও কমেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে তারা আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না? সময়ই এর উত্তর দেবে।