“গণমাধ্যম নীরব কেন” – মির্জা আব্বাসের প্রশ্ন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রশ্ন তুলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে ওঠা ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ নিয়ে গণমাধ্যম কেন নীরব।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। এতে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক ও ভিডিও সাংবাদিকদের সম্মানে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটি বিশেষ দল সম্পর্কে আপনারা কোনো সাংবাদিক কোনো কিছুই লিখছেন না, পর্দা অন্তরালে আরও অনেক কিছু আছে, ঘটছে, আপনারা কিন্তু লিখছেন না। শুধু লিখছেন বিএনপি সম্পর্কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে, বাড়িয়ে লিখছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা লিখছেন না কোন কোন ব্যবসায়ী হেলিকপ্টারে বেড়াতে যায়, কোন ব্যবসায়ী কাকে কত টাকা দেয়, কোন ব্যবসায়ী আজকে আমাদের অনেক রাজনৈতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে…যাদের নামে হত্যা মামলা থাকার পরও…একটি-দুটি নয়…এই ঘটনার পরেও অনেক ঘটনা রয়ে গেছে।’

‘আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) সমালোচনা করছি না। আমি আপনাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই যে, আপনারা কোথায় কোখায় ভুল করছেন,’ যোগ করেন তিনি।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, জাতির ক্ষতি হচ্ছে। আপনারা (গণমাধ্যম) কেন তুলে ধরছেন না—জুলাইয়ের প্রথম দিকে ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে কারা কারা ছিল, কারা কারা গ্রেপ্তার হয়েছে, কারা হয়নি। কেন হয়নি এটা কিন্তু আপনাদের তুলে ধরা দরকার। এসব লোকগুলো গত ১৭ বছর টাকা কামিয়েছে, আর আগামী ১৭ বছর এই টাকা খরচা করবে বাংলাদেশ ধ্বংস করার পেছনে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সফলতার শেষ মুহূর্তে গত বছরের ৩ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্মেলনে কোনো কোনো ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন তা গণমাধ্যম প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি।

‘সুতরাং আপনারা দয়া করে ওই সমস্ত ব্যক্তিদের একটু তুলে ধরেন…সাবধান করেন। ওরা মনে করে, টাকা হলে বোধ হয় পৃথিবীটা পকেটে নেওয়া যায়। কিন্তু ওরা জানে না, টাকা হলে সব সাংবাদিকদের কেনা যায় না,’ বলেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এসব ব্যবসায়ীদের অনেকের নামে হত্যা মামলা থাকলেও কেন তারা গ্রেফতার হচ্ছেন না? শুধুমাত্র ব্যবসায়ী নয়, সচিবালয়ে খবর নেন। সেখানে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো অবস্থান নিয়ে আছে। তাদের অনেকেই এখনো আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করার চেষ্টা করছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা যেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে নতুন করে কোনো ভুল না করি। ছাত্র এবং পাশাপাশি জনতার যে অভ্যুত্থান সেটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঠিক রেখেই আমাদেরকে চলতে হবে। তিনি বলেন, এখনো কেন সাংবাদিকতার বিকাশে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা হয়নি। এই আইন কার স্বার্থে এখনো বলবৎ রয়েছে তা সরকারের কাছে প্রশ্ন করেছেন সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, দলের কঠিন দুঃসময়ে সাংবাদিকরা ছিলেন আমাদের অন্যতম ভরসা। সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জাতি জানতে পেরেছে। আগামীতেও সবসময় সাংবাদিকদের সহযোগিতা বিএনপি পাবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় ইফতার পার্টিতে আরও বক্তব্য দেন- সংগঠনের উপদেষ্টা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সংগঠনটির উপদেষ্টা ও বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মিডিয়া সেলের সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ উপদেষ্টা ও বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, উপদেষ্টা মো. আবুল কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, বিএনপি চেয়াপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. একেএম শামছুল ইসলাম ও ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *