সম্রাট আকবর সবুজ (Samrat Akbar Sabuj), পেশায় একজন ভ্যানচালক, ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে সবজি পরিবহনের কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে বগুড়া (Bogra) জেলায় এক গাড়িচালকের সঙ্গে বিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই চালক সবুজের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এই আঘাতের পর চিকিৎসা নিলেও পরে তিনি জুলাই ফাউন্ডেশনে (July Foundation) আহতদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে তাকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের প্রমাণস্বরূপ ছবি বা ভিডিও প্রদর্শনের শর্ত দেওয়া হয়।
প্রতারণার কৌশল
সবুজ তার বন্ধু মোহাম্মদ নূর আলম (Mohammad Noor Alam) এর সহযোগিতায় মুরগির রক্ত মাথা ও শরীরে মেখে রাস্তায় শুয়ে ছবি তোলেন এবং ভিডিও তৈরি করেন। এই ছবি ও ভিডিও জমা দিয়ে তিনি জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় (Ministry of Social Welfare) থেকেও সহায়তা বাগিয়ে নেন। সম্প্রতি ফাউন্ডেশনের তদন্তে এই প্রতারণা ধরা পড়ে।
তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্য
শুধু সবুজই নন, এমন অনেকেই একই কৌশলে প্রতারণা করে অনুদান গ্রহণ করেছেন। জুলাই ফাউন্ডেশনের তদন্তে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক প্রতারণার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। ধরা পড়াদের কেউ কেউ বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত দিয়েছেন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তিনজন ইতোমধ্যে কারাগারে রয়েছেন।
স্বীকারোক্তি ও প্রতিক্রিয়া
গতকাল মঙ্গলবার, জুলাই ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে সবুজকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মুরগির রক্ত মেখে ছবি তুলেছেন এবং তার মাথার আঘাত ব্যক্তিগত ঝগড়ার সময়ের। প্রতারণার কথা স্বীকার করায় তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর আন্দোলনে আহত কয়েকজন ব্যক্তি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে জড়ো হন এবং সবুজের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আহতদের মধ্যে একজন, সোহান (Sohan), যিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (Bangladesh Medical University Hospital) এ চিকিৎসাধীন, তিনি বলেন, “আমরা প্রকৃত আহতরা সহায়তা পাইনি, অথচ এই প্রতারক টাকা নিয়ে গেছে। আমরা এর কঠোর শাস্তি চাই।”
প্রতারণার আরও ঘটনা
জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ (Mir Mahbubur Rahman Snigdho) বলেন, “আমরা প্রতিদিন নানা কৌশলে প্রতারণা ধরার চেষ্টা করছি যাতে প্রকৃত আহত ও নিহতদের পরিবারই অনুদান পায়।” প্রধান ভেরিফিকেশন অফিসার মো. হারুন (Md. Harun) এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন (Md. Zahid Hossain) এই তদন্ত কাজে সহায়তা করছেন।
গত ১৪ই আগস্ট যাত্রাবাড়ী (Jatrabari) এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত সাইফ আরাফাত শরীফ (Saif Arafat Sharif) এবং মো. সাইদুল ইসলাম ইয়াছিন (Md. Saidul Islam Yasin) এর নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এ আন্দোলনে শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই তথ্য ব্যবহার করে অনুদানও বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আইনগত পদক্ষেপ
জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোহেল মিয়া (Sohel Mia) রমনা থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত জুনায়েদ (Junaid) এবং আবুল কালাম (Abul Kalam) আদালতে হাজির হয়ে জামিন পেয়েছেন। জুনায়েদ আদালতে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া অর্থের মধ্যে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন এবং বাকি অর্থ পরবর্তী শুনানিতে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবুল কালামও পরবর্তী শুনানিতে অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে জামিন পেয়েছেন।
ফাউন্ডেশনের লিগ্যাল অফিসার এডভোকেট পায়েল (Advocate Payel) বলেন, “আমরা যারা প্রতারণা করে অনুদান নিয়েছে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।” তথ্যসূত্র : মানবজমিন