বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিচারের পাশাপাশি কাঠামোগত পরিবর্তন। কিন্তু ছয়-সাত মাস পরও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি, বরং অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আস্থা ও সমালোচনা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে ইতিবাচক বার্তা গেলেও, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে, বিশেষত তাদের একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিচার ও সংস্কার: গতি মন্থর
গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার সহিংসতায় হতাহতদের পুনর্বাসন ও বিচারপ্রক্রিয়া ধীর গতিতে এগোচ্ছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন (UN Human Rights Commission) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিচারের দাবি আরও জোরালো হলেও, প্রধান উপদেষ্টা তড়িঘড়ি কোনো রায় না দেওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ছিনতাই, ডাকাতি, নারী ও শিশু নিগ্রহের মতো অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা দেশ-বিদেশে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও তারা প্রত্যাশিত সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না বলে সমালোচনা রয়েছে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে অস্পষ্টতা
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব উঠলেও জনগণের চাহিদা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দিকেই বেশি। তবে এখনো নির্বাচন কমিশন কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করেনি, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও বাজেট সংকট
অর্থনৈতিক দুরবস্থা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও শিল্পখাতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ফলে দেশে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করতে হবে, যা বিভিন্ন মহলকে সন্তুষ্ট রাখা কঠিন করে তুলবে।
জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা
অস্থির পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একমত হচ্ছে বিভিন্ন মহল। সেনাপ্রধানও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে হবে, নইলে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।