ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নে আয়োজিত পুলিশের ওপেন হাউজ ডে-তে অতিথির আসনে বসানো হয়েছে হত্যা মামলার আসামির বাবা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সামশুল হক-কে। বিষয়টি সামনে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বালিয়াডাঙ্গী থানা-পুলিশের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়। এতে অংশ নেন পুলিশ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়ে নেয় সামশুল হকের উপস্থিতি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, সহকারী পুলিশ সুপার স্নেহাশীষ কুমার দাস বক্তৃতা দিচ্ছেন মঞ্চে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শওকত আলী সরকার, জামায়াত নেতা ইলিয়াস আলী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আইয়ুব আলী। ডান পাশে বসা বিএনপি নেতা আইয়ুব আলীর পরে আসীন ছিলেন সামশুল হক—যার পুত্র বকুল জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু রায়হান হত্যার মামলার ৫১ নম্বর আসামি।
এছাড়া সামশুল হকের আরেক পুত্রের বিরুদ্ধেও রয়েছে জমি দখল, হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।
এই বিষয়টি সামনে আসতেই স্থানীয়দের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, একজন হত্যা মামলার আসামির বাবাকে কীভাবে পুলিশের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে রাখা হলো? একাধিক রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মাঝেও এই বিষয়টিকে অনেকেই দেখছেন প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও বিতর্কিত অবস্থান হিসেবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জামায়াত নেতা ইলিয়াস আলী সাংবাদিকদের বলেন, “কে আসামি আর কে ভালো মানুষ—এটা নির্ধারণের দায়িত্ব পুলিশের। তবে পুলিশ যদি এমন কাউকে অতিথির আসনে বসায়, আমাদের কিছু করার নেই। সত্যি বলতে বিষয়টি জেনে আমারও খারাপ লাগছে। জুলাই অভ্যুত্থান এ দেশের গর্ব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি শওকত আলী সরকার বলেন, “মামলাটি যেহেতু ঠাকুরগাঁও সদর থানায় হয়েছে, আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না।” এরপর সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, “আপনি জানতেন, তাহলে আগে বলেননি কেন?”
এদিকে সহকারী পুলিশ সুপার স্নেহাশীষ কুমার দাস জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনগণের চোখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে এমন সময় প্রশ্ন উঠল, যখন রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ঘিরে দেশজুড়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।