১৯৭১ সালের রক্তঝরা ইতিহাস এবং এর দায় নিয়ে ফের আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Parwar) সম্প্রতি এক টক শো অনুষ্ঠানে বলেন, “গণহত্যা হয়েছে—এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। সুতরাং যারা সত্যিকার অর্থে এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
তিনি এই মন্তব্য করেন সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালিত ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামক আলোচনায় অংশ নিয়ে। আলোচনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর এমন একটি বৈঠক হওয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত।
তার মতে, বৈঠকে উত্থাপিত চারটি প্রধান প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলোর সমাধান প্রয়োজন। তিনি বলেন, “গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে থাকা পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়া, বাংলাদেশের সম্পদের ন্যায্য হিসাব ফেরত দেওয়া এবং ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো সহায়তার অর্থের হিসাব—এসব প্রশ্নের পেছনে যৌক্তিকতা রয়েছে। এগুলো বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের দাবি।”
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, “আমরা সাদাকে সাদা বলি, কালোকে কালো বলি। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে, তারা যদি গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন। এটি ইতিহাসের প্রতি সম্মান এবং ভবিষ্যতের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।”
তিনি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আটকে থাকা পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, “এখানে থাকা অনেক পাকিস্তানি অমানবিক জীবনযাপন করছে। আমরা তাদের দুঃসহ অবস্থার কথা জানি। তাই তাদের দেশে ফেরত যাওয়ার দাবি শুধুই রাজনৈতিক নয়, এটি মানবিকও।”
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের এই স্পর্শকাতর অধ্যায় নিয়ে এমন বক্তব্য, বিশেষত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) পক্ষ থেকে আসা, রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা উস্কে দিয়েছে। বিশেষ করে দলটির ১৯৭১ সালের ভূমিকা ঘিরে দেশজুড়ে যে বিতর্ক রয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।