সিলেটের বিয়ানীবাজারে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামি ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামে অভিযান চালাতে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত হন উপপরিদর্শক সৌরভ ও কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন, যাদের পরে পাঁচ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল বিয়ানীবাজার পৌর শহরের মাঝবাজার এলাকায় এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি জামিল আহমদকে গ্রেপ্তারের জন্যই অভিযানে যান পুলিশ সদস্যরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, জামিল অবস্থান করছেন ঘুঙ্গাদিয়ার উপজেলা জামায়াত নেতা আবুল খয়ের (Abul Khayer) এর বাড়ির কেয়ারটেকারের ঘরে।
অভিযান চালাতে গেলে আবুল খয়ের পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং প্রশ্ন তোলেন কেন তাকে না জানিয়ে অভিযান চালানো হলো। তিনি এ নিয়ে স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের অবহিত করলে, তারা সেখানে এসে পুলিশের ওপর চড়াও হন। স্থানীয় সূত্র জানায়, একপর্যায়ে দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করে জিম্মি করা হয়।
খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান (Ashraf Uzzaman) ও তদন্ত কর্মকর্তা জুবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা পর ওই দুই সদস্যকে উদ্ধার করে। স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, পুলিশ সদস্যরা বাড়ির ভেতরে বসে আছেন। এরপর শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
আবুল খয়ের অবশ্য ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ তার বাড়িতে প্রবেশ করে খারাপ আচরণ করে। পরে উত্তেজিত জনতা সেখানে গেলে তিনি দুই পুলিশ সদস্যকে নিজের ঘরে নিরাপদে রাখেন এবং থানার ওসি এলে তাদের হস্তান্তর করেন। খয়েরের দাবি, পুলিশ সদস্যরা তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, উপপরিদর্শক সৌরভ ও কনস্টেবল দেলওয়ারকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন মারধর করেছে। পরে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের একটি দল স্থানীয় জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান এই ঘটনাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে অভিহিত করেছেন। তার ভাষায়, “আমাদের লোকজন অভিযানে গিয়েছিল, এলাকাবাসীর সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি, তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত চলছে।