বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) বলেছেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের শাসনকাল থেকেই বিএনপির সংস্কার যাত্রা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কর্মশালায় যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, তখন স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকেও উপেক্ষা করেছি। আজ যারা সংস্কার নিয়ে কথা বলছেন, তাদের বিবেচনার উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা যা বলেছি, তা পূরণ করেই ছাড়ব।”
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে বিএনপির প্রশিক্ষণ সেলের নেতারা ‘৩১ দফা সংস্কার’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারেক রহমান বলেন, এই ৩১ দফা কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি মাঠ পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কাজও চলছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি দাবি করেন, দেশের ৭০ শতাংশ ভালো কাজ বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে। কর্মশালার আলোচনায় সামাজিক সমস্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশ বিষয়ক প্রশ্নগুলো বেশি এসেছে বলে জানান তারেক।
তার বক্তব্যে উঠে আসে একটি স্পষ্ট বার্তা—জনগণের আস্থা অর্জন করতে বিএনপিকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। তারেক রহমান বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, দেশের ভালো কিছু করার জন্য বিএনপিই সবচেয়ে উপযুক্ত। জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও কিছু মহলের স্বার্থের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। সেই ব্যবধান পেরিয়ে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে সব কিছু থমকে যায়। সেজন্য ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার বিকল্প নেই। “ভোট আনতে হলে জনগণের কাছেই যেতে হবে। তাদের সঙ্গে থাকতে হবে, যে কোনো মূল্যে,”—এভাবেই জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার ডাক দেন তারেক।
তারেক রহমান জানান, দল আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, যেকোনো মূল্যে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। সেই গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করছে গণতন্ত্রের জন্য। এই দীর্ঘ আন্দোলনে অনেক নেতা-কর্মী গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। এই ত্যাগকে কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।
সবচেয়ে আবেগঘন অংশে এসে তারেক রহমান বলেন, “পৃথিবীর কোনো দেশে যুদ্ধ না হলে শিশু হত্যা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে প্রায় ১০০ শিশু খুন হয়েছে। তারা কোনো অপরাধ করেনি। শুধুমাত্র গণতন্ত্র চাওয়াটাই তাদের অপরাধ ছিল।” তার বক্তব্যে উঠে আসে—এই নির্মমতা এবং এই বলিদানের পেছনে থাকা একমাত্র লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।