বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা রকম অপপ্রচার। বিশেষত কলকাতা ভিত্তিক টিভি চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা (Republic Bangla) এই অপপ্রচারে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছে। চ্যানেলটির প্রধান উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের সংবাদ উপস্থাপনার ধরণ ঘিরে ইতোমধ্যেই তার নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র বিক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড়।
সম্প্রতি কলকাতায় সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের ব্যানারে ময়ূখের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ হয়। চ্যানেলটির কার্যালয়ের সামনে তারা বিক্ষোভ করেন এবং বলেন, রিপাবলিক বাংলার ‘খবর’ আসলে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও মিথ্যা তথ্যের মিশেল। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ—হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা ছড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন উপস্থাপনা করা হচ্ছে, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শুধুমাত্র একজন সাংবাদিক নন, বরং ভারতের ডানপন্থী রাজনৈতিক দল বিজেপি (BJP) এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস (RSS)-এর মতাদর্শের একজন প্রচারক। আন্দোলনকারীদের মতে, তার সংবাদ উপস্থাপনা মূলত চিৎকার-চেঁচামেচি, রাজনৈতিক পক্ষপাত ও উগ্র মতাদর্শের প্রকাশ। অনেকেই এটিকে ‘হকার সাংবাদিকতা’ বলে অবহিত করেছেন।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে সব ভিত্তিহীন খবর সম্প্রচার করছেন ময়ূখ, সেগুলোর উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করা এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এমন সংবাদ শুধুমাত্র দুই দেশের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্ব নষ্ট করছে না, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
প্রতিবাদকারীরা এটাও বলেন, এই ধরনের সাংবাদিকতা ভারতের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই ময়ূখ রঞ্জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে জানান, এখনই যদি এ ধরনের অপসাংবাদিকতা থামানো না হয়, তবে তার ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে রাজ্যের অর্থনীতিতেও।
বিক্ষোভকারীদের মতে, সাংবাদিকতার নামে চরম পক্ষপাত ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলছে। আর তা যদি প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ঘিরে হয়ে থাকে, তবে ভারতকেও এর পরিণতি ভুগতে হবে।