বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam)। ব্যক্তিগত বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের (Awami League) রাজনীতিতে ফেরার আর কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই। জনগণের স্মৃতিতে বিগত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ড এতটাই তাজা যে, আগামী ১৫ বছরও তার প্রভাব কাটবে না।
শফিকুল আলমের মতে, আওয়ামী লীগ যদি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও দুর্নীতির জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইত, তাহলে অল্প সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত। কিন্তু দলটি এখনো ১,৪০০ জন নিহতের গণহত্যা স্বীকারে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিষ্ঠুরতার পথেই রয়ে গেছে। এমন অবস্থায় রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই বলেই তার বিশ্লেষণ।
তৃণমূল পর্যায়ে ভাঙন ও পুনঃসামঞ্জস্য
প্রেস সচিবের অভিমত, আওয়ামী লীগের তৃণমূল সমর্থকরা অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তিগুলোর—যেমন বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami), ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh)—সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের আকাঙ্ক্ষা এই স্থানান্তরের প্রধান চালিকাশক্তি হবে বলে তিনি মনে করেন।
নগর অভিজাতদের নতুন অবস্থান
রাজধানীসহ নগর এলাকায় আওয়ামীপন্থী অভিজাতরা, যারা সাম্প্রতিক সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তারা হয় নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনে উদ্যোগী হবেন অথবা বিদ্যমান বাম-উদারপন্থী দলগুলোর সঙ্গে হাত মেলাবেন। যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে সফল, তারা সরাসরি রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে সরে দাঁড়াবেন।
প্রবাসী আওয়ামী লীগের নতুন কৌশল
বিদেশে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা এবং প্রবাসী সমর্থকেরা দলটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। বিশেষ করে প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে বিদেশ থেকে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা জারি থাকবে। ভুল তথ্য ছড়িয়ে সমর্থন আদায় করাই হবে তাদের মূল কৌশল।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিক্রিয়া
শফিকুল আলমের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নীরবে মেনে নিচ্ছে। বিশেষ করে জুলাইয়ের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের জবাবদিহিতার অভাব এই নীরবতার কারণ। অতীতে বিএনপি ও জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকাকালে পশ্চিমারা যেভাবে নীরব ছিল, এবারও একই মনোভাব দেখা যাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কিছু বিবৃতি থাকলেও, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা প্রভাব কমছে। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে বিদেশি সাহায্যের প্রাধান্য পরিবর্তন ও দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির বাস্তবতা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এখন স্পষ্টতই এক নতুন বিন্যাসের ইঙ্গিত মিলছে, যেখানে পুরোনো দলগুলোর ভূমিকা নতুনভাবে নির্ধারিত হতে চলেছে।