ভারতের ‘চিকেনস নেক’ হিসেবে পরিচিত ভূকৌশলগতভাবে সংবেদনশীল শিলিগুড়ি করিডরের কাছেই সম্প্রতি একটি বিস্তৃত সামরিক মহড়া চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী (Indian Army)। পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা নদীর অববাহিকায় ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা এই মহড়ার নাম ছিল ‘তিস্তা প্রহার’। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু যুদ্ধ-প্রস্তুতি নয়, বরং এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোকে কৌশলগত বার্তা দিতে চাইছে ভারত।
‘চিকেনস নেক’ নামক অঞ্চলটি ভারতের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করিডর। এটি মূল ভারতবর্ষকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে রেখেছে। মাত্র ১৭ কিলোমিটার প্রশস্ত এই ভূখণ্ডে ভারত যেকোনো নিরাপত্তা সংকটকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকে। আর সেখানেই এ মাপের সামরিক মহড়া ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, এই মহড়ায় নদীবিধৌত অঞ্চলে যৌথ যুদ্ধ কৌশল এবং যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির সক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাকটিক্যাল ড্রিল ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে—যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রতিফলন।
সেনাবাহিনী যে ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে আর্টিলারি, ট্যাংক, হেলিকপ্টার, সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং ড্রোনের উপস্থিতি দেখা গেছে। এটি কেবল ‘রুটিন এক্সারসাইজ’ নয়, বরং তিস্তা অববাহিকায় গত কয়েক দশকে হওয়া অন্যতম বড় সামরিক মহড়া বলে জানিয়েছে দিল্লির সামরিক সূত্র।
আঞ্চলিক বার্তা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
লন্ডনভিত্তিক ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিৎ দেব সরকার (Priyojit Debsarkar) বিবিসিকে বলেন, এই মহড়া ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোকে একটি বার্তা দিতেই আয়োজন করেছে। তাঁর ভাষায়, “এর মধ্যে সূক্ষ্ম প্ররোচনার উপাদানও রয়েছে, যা অবশ্যই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-কে খুশি করবে না।”
যদিও সরকারিভাবে বাংলাদেশ এই মহড়া নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে তিস্তা নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে জলবণ্টন ইস্যুতে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে চীনও তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
হাসনাতের মন্তব্যে উঠে আসে সতর্কবার্তা
বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসনাত বিবিসিতে বলেন, “ভারতের সামরিক তৎপরতা মনে করিয়ে দেয়—চিকেনস নেক শুধু ভারতের নিরাপত্তার নয়, বাংলাদেশের ভূকৌশলগত বাস্তবতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই মহড়ার সময় ও অবস্থান—উভয়ই পরিকল্পিত। এটি কেবল অভ্যন্তরীণ যুদ্ধপ্রস্তুতির অংশ নয়, বরং একটি কৌশলগত ডিসপ্লে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট।