বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)–কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বৈধ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ টানা পঞ্চম দিনের মতো অবরোধে রয়েছে নগরভবন। বিক্ষোভকারীদের দাবি—আদালতের রায়, জনগণের রায়, সবই স্পষ্ট; এখন শুধু সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই ইশরাকের শপথ আটকে রাখা হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দল-মত নির্বিশেষে জনগণের অংশগ্রহণে নগরভবনের সামনে নতুন কর্মসূচি হিসেবে মূল ফটক অবরোধ করে রাখা হয়। এতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নগরভবনের মূল ফটকসহ অন্যান্য দপ্তরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তাদের দাবি, “নির্বাচনের চার বছর পর ট্রাইব্যুনাল যখন ফজলে নূর তাপসকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন আর কোনো অজুহাত চলে না। গেজেট প্রকাশ হয়েছে ২০ দিন আগে, অথচ এখনো শপথ পড়ানো হয়নি।”
গণরায়ের প্রতি সরকারের সম্মান না থাকলে কঠোর হবে আন্দোলন
বিক্ষোভকারীরা জানান, “আমরা পরিষ্কার বলতে চাই—ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে নগরসেবা সাময়িক বন্ধ থাকলেও, এটা করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আদালতের রায় বাস্তবায়ন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।”
তারা আরও বলেন, “আমাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি কেউ যেন নস্যাৎ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। আমরা চাই প্রশাসন ও সরকার রায় বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুক।”
এদিকে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, “আমরা সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতের রায় পেয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাপস প্রথমে প্রভাব খাটিয়ে মামলা আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিচার বিভাগকে সম্মান করে আমরা অপেক্ষা করেছি। এখন রায় এসেছে, গেজেট প্রকাশ হয়েছে, আর দেরি কেন?”
তিনি আরও বলেন, “কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে যদি আদালতের রায় আটকে রাখা হয়, তাহলে সেটি সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত শপথ নেওয়ার জন্য, সরকার যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাহলে এক মুহূর্তও দেরি করা উচিত নয়।”
অতীতের ভোট, বর্তমানের রায়
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস (Sheikh Fazle Noor Taposh) পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে পরাজিত করেছিলেন বলে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তবে সম্প্রতি ২৭ মার্চ, দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ট্রাইব্যুনাল ঐ নির্বাচনী ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেয়। এই রায়ের ভিত্তিতে ২২ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়ে গেজেট প্রকাশ করে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণ হয়নি, আর সেটিকে কেন্দ্র করেই এই টানা আন্দোলন ও নগরভবন অবরোধের কর্মসূচি চলছে। নগরবাসী বলছে, জনতার রায় কার্যকর না হলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না।