উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি ‘বিভ্রান্তিকর ও অস্পষ্ট’: সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুললো বিএনপি

সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অসুবিধার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের দেওয়া বিবৃতিকে ‘বিমূর্ত, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি (BNP)। দলটির অভিযোগ, এই বিবৃতির আড়ালে সরকার নিজেই জনমনে সন্দেহ-সংশয়ের জন্ম দিচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (Khandaker Mosharraf Hossain) এই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের দেওয়া ‘পরাজিত শক্তি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র’ প্রসঙ্গটি রাজনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গত ২৪ মে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়— যদি বিদেশি ষড়যন্ত্র ও পরাজিত শক্তির ইন্ধনে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার জনসমক্ষে সব কারণ তুলে ধরে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

এই প্রসঙ্গে বিএনপির প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি ও দুর্বলতা জনমনে সন্দেহ তৈরি করেছে। অযৌক্তিক দাবি ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্যের কারণে যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর জন্য সরকার নিজেই দায়ী। কিন্তু এখন সেসব সংকট ঢাকতে ‘পরাজিত শক্তি’ আর ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ নামক এক বিমূর্ত হুমকির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।

ড. মোশাররফ বলেন, “পরাজিত শক্তি এবং ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে চাইলে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। এটাই একমাত্র পথ।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার এগিয়ে নিতে হবে। আর তা করতে গেলে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য এখন সময়ের দাবি।”

বিএনপি নেতা আরও বলেন, তারা সরকারকে সবসময় সহযোগিতা করেছে এবং এমন কোনো কার্যক্রমকে উৎসাহ দেয় না যা নির্বাচন বা বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে ‘কোনো কোনো মহল দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে’ বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়।

এ সময় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণের দাবি তুলে তিনি বলেন, “জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় ভাঙন না ধরে বরং বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই এখন জরুরি। বিতর্কিত উপদেষ্টারা থাকলে সেই ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

তিনি সরকারের সাম্প্রতিক আচরণকেও স্বৈরাচারী ধাঁচের বলে আখ্যায়িত করেন, যা জনগণের মধ্যে আবারও ‘আইনের শাসন’ নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস (Mirza Abbas), ড. আবদুল মঈন খান (Dr. Abdul Moyeen Khan), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khosru Mahmud Chowdhury), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (Iqbal Hasan Mahmud Tuku), সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *