মুরগীর খোপে থাকার আশ্রয় মিললো বৃদ্ধা মায়ের

পটুয়াখালীর লাউকাঠীতে ঘটে চলেছে এক হৃদয়বিদারক মানবিক ট্র্যাজেডি। যে মা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সন্তানদের সুখের জন্য নিজেকে নিঃশেষ করেছেন, সেই নুরজাহান বেগমের শেষ আশ্রয় হয়ে উঠেছে মুরগি রাখার একটি খোপ! ভিক্ষা করে সন্তানদের বড় করা এই বৃদ্ধা মা আজ বসবাস করছেন একটি স্যাতস্যাতে, অন্ধকার আর বদ্ধ খোপে, যেখানে নেই বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, নেই কাঁথা কিংবা বালিশের মতো ন্যূনতম আশ্রয়ের উপাদান।

স্থানীয়রা জানান, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকালে সন্তান ও পুত্রবধূরা বৃদ্ধা মাকে সেই খোপেই ফেলে রেখে ঘরে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে যান। সারাদিন সেই অসহায় মা খাবারের জন্য চিৎকার করলেও শোনার কেউ নেই। সামান্য পানি চাওয়ার আকুতি ও ব্যথায় ছটফট করা আহাজারি যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়।

সম্প্রতি নুরজাহান বেগম পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান ও একটি হাত ভেঙে যায়। কিন্তু চিকিৎসা তো দূরে থাক, তাকে দেখারও কেউ নেই। সন্তানদের দায়িত্বহীনতায় এক সময়ের স্নেহময়ী মা আজ নিজেই খাবার আর আশ্রয়ের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

অবস্থা এমনই নাজুক যে, সাম্প্রতিক বন্যার জোয়ারের পানিতে তার থাকার জায়গার চারপাশ এখন পানিতে থইথই করছে। এতে তার মধ্যে নতুন করে জন্ম নিয়েছে আতঙ্ক—এই খোপটিও যদি ভেসে যায়, তাহলে আশ্রয় মিলবে কোথায়?

এই নির্মম ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠী ইউনিয়ন (Patuakhali Sadar Upazila) এর দক্ষিণ লাউকাঠী গ্রামে। সাংবাদিকরা বৃদ্ধার দুই সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কাউকেই পাওয়া যায়নি।

নুরজাহানের জীবনের ত্যাগগাঁথা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দিলেই সন্তানের কর্তব্য শেষ হয় না। একটি মা দশ মাস গর্ভধারণ করেন, প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করেন, নিজের অন্ন জোগাড় না করেও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। তার বিনিময়ে কি প্রাপ্য কেবল অবহেলা আর মুরগির খোপ?

এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রশ্ন জাগে—আজকের সমাজ কি এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে? আমাদের শিক্ষা কি কেবল ডিগ্রি অর্জনে সীমাবদ্ধ? না কি তার চেয়েও বড় কিছু, যেমন মানবিকতা, করুণা ও দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছি আমরা?

মা আমাদের জান্নাতের দরজা—সেই দরজায় তালা দিয়ে রেখে যাঁরা নিজেদের পৃথিবী সাজান, তারা কি আদৌ মানুষ? প্রয়োজন শুধু একটু বিবেক, একটু মমতা, আর একটি হৃদয়—তবেই হয়তো এই সমাজ আরও মানবিক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *