চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জোনায়েদ সাকি (Jonaid Saki) বলেন, মব হেনস্তার মতো ঘটনা শুধু বেআইনি নয়, বরং এসবের পরিণতি ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিকে আরও সহিংস করে তুলবে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা (KM Nurul Huda) কে গ্রেপ্তারের আগে কথিত জনরোষের ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, গলায় জুতার মালা পরানো মানবিক অপমানের চূড়ান্ত রূপ এবং এই সংস্কৃতি একসময় “ফেরত আসবে”।
শুক্রবার (২৬ জুন) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব (Chattogram Press Club)-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী সাকি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মব আক্রমণ হচ্ছে। প্রেস সেক্রেটারি বলছেন এটা মব না, প্রেশার গ্রুপ। সেটা কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, তার বিচার আদালতের মাধ্যমেই হোক। তার বাড়িতে হামলা করার অধিকার কারো নেই।”
সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সাকি বলেন, “সরকার কি নিজেই এসব উসকে দিচ্ছে? আগে নাটক বানিয়ে তারপর গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটা তো শেখ হাসিনার পুরোনো প্যাটার্ন—কাউকে আগে সামাজিকভাবে হেয় করা, এরপর আইনি প্রক্রিয়া শুরু।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দায়-দায়িত্ব নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে আমরা আগেও বলেছি। সেটার স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটা একেবারে মানবিকতা লঙ্ঘন।”
সাকি বলেন, “আপনি একজন অপরাধীকেও অপমান করতে পারেন না। এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিলেও, তার কিছু মানবিক অধিকার রক্ষা করা হয়। জুতার মালা পরিয়ে, সামাজিকভাবে হেয় করা—এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
গণতন্ত্রে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন কতটা বিপজ্জনক, সে বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “এই উদাহরণ ফেরত আসবে। আপনি যখন অন্যকে অপমান করার সুযোগ তৈরি করেন, তখন ভবিষ্যতে সেটাই আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে সমাজের মূল গণতান্ত্রিক কাঠামোই ভেঙে পড়বে।”
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের (Chattogram Port) এনসিটি ব্যবস্থাপনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাকি বলেন, “এই বন্দর জাতীয় সম্পদ। এর ওপর আমাদের সার্বভৌম অধিকার থাকা উচিত। অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে, কিন্তু সেটি স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই হতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “এভাবে জনগণের সম্পদ নিয়ে গোপনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলবে।”