আ.লীগের কোষাধ্যক্ষের জায়গা হলো ইসলামী আন্দোলনে

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দীর্ঘ ১৮ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের (Awami League) কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা গোলাম রাব্বানী এবার রাজনীতির ভিন্ন পথে পা রাখলেন। সম্প্রতি তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে (Islami Andolon Bangladesh) যোগ দিয়ে ‘হাতপাখা’ প্রতীকের পতাকা তুলে নিয়েছেন। এ ঘটনা সোনাইমুড়ীসহ গোটা নোয়াখালীতে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া।

ঘটনাটি ঘটে উপজেলার জয়াগ রশিদিয়া আলিম মাদরাসার মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতামত গ্রহণ অনুষ্ঠানে, যেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে গোলাম রাব্বানী আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি আন্দোলনে যোগদানের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “আমি বহুদিন ধরে চিন্তাভাবনা ও সংগঠন নিয়ে পড়াশোনা করে নিশ্চিত হয়েছি—ইসলামী আন্দোলনই দেশের সবচেয়ে আদর্শিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আমি ও আমার পরিবার এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছি।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় যুবনেতা আবদুজ্জাহের আরিফী এবং নোয়াখালী উত্তর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা কামাল উদ্দিন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের লিখিত মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

গোলাম রাব্বানীর এই দলবদল রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখলেও, অনেকেই এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। একজন স্থানীয় নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “এত বছর দলের সুবিধা নিয়েছে, আর এখন ভোটের আগে গিয়ে হাতপাখা ধরেছে! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?”

সামাজিক মাধ্যমেও চলছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা। কেউ কেউ রাব্বানীর এই পদক্ষেপকে ‘চমকপ্রদ’ এবং ‘কৌশলগত’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে অনেকে এটিকে আদর্শিক জাগরণ হিসেবে অভিহিত করছেন।

এ প্রসঙ্গে রাব্বানী বলেন, “আমি কখনো আওয়ামী লীগ থেকে ব্যক্তিগত লাভ নেইনি। বরং দীর্ঘদিন কাজ করেছি। কিন্তু মনে হচ্ছিল ইসলামী কোনো দলে যুক্ত হওয়া উচিত। বহু ভেবেচিন্তেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সোনাইমুড়ী থানা সভাপতি হাফেজ ইসমাইল হোসাইন মিয়াজী বলেন, “গোলাম রাব্বানী ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। তিনি আন্তরিক মানুষ, আল্লাহর হুকুমেই তিনি আজ ইসলামী আন্দোলনের ছায়ায় এসেছেন।”

এই দলবদল শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং এটি স্থানীয় রাজনীতির আদর্শিক ভারসাম্যেও নতুন মাত্রা যুক্ত করলো বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *