নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পুনর্গঠনের দাবিতে চাপ বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ একাধিক দল এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে আওয়াজ তুলছে। তাদের দাবি, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ইসি পুনর্গঠন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এমন এক সময়েই নানা নাটকীয়তা ঘিরে কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকায় জল্পনা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
গত ২২ জুন জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party)-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হতে হবে, হবেই। আমরা আর কোনো বিকল্প ভাবছি না।’ সেদিন বিকালেই তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক ঘিরে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়, কারণ একই সময় একাধিক সূত্র জানায়, সরকার পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ছিল বর্তমান ইসির শেষ কর্মদিবস, সেদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Prof. Muhammad Yunus) প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি বার্তা দেন। তাতে ইসি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। সেই বার্তার পর থেকেই সিইসি নাসির উদ্দিন অফিসে আসেননি। যদিও ইসি সচিব জানিয়েছেন, তিনি ‘চিকিৎসাধীন’। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ একে দেখছেন ‘পলিটিকো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সিকনেস’ হিসেবে।
গতকাল নির্বাচন কমিশন ভবনে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ নিয়মিতভাবে অফিস করেছেন। তবে সিইসির অনুপস্থিতি নিয়ে ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে সারা দিন জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। মিডিয়া কর্মীরাও এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, সিইসি চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (Mohammed Shahabuddin) গঠন করেন পাঁচ সদস্যের এই কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন। কমিশনার হিসেবে যুক্ত হন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাছউদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ, অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। রাষ্ট্রপতির অনুমোদিত সার্চ কমিটির তালিকা থেকে তাদের নাম বাছাই করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২৪ নভেম্বর সিইসি নাসির উদ্দিন এবং চার কমিশনার শপথ নেন। নাসির উদ্দিন দেশের চতুর্দশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন।
এর আগে, গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও তার নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ করেন। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি (BNP) ও মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে। কিন্তু মাত্র আট মাসের মাথায় গণআন্দোলনের মুখে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।