রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও নির্বাচনি প্রহসনের অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal)-কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি. এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালতে শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতে আউয়ালের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হলেও, রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী (Omar Faruk Faruki) তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, “আউয়ালরা যদি শাস্তির আওতায় আসে, তাহলে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন সম্ভব হবে। জামিন পেলে তারা আবারো রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে।”
শুনানি শেষে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং কারা বিধি অনুযায়ী ডিভিশন ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার নির্দেশও দেন।
গ্রেপ্তার থেকে রিমান্ড
এর আগে, গত ২৫ জুন রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ২৬ জুন আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার পটভূমি ও বিস্তৃতি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি (BNP) গত ২২ জুন একটি মামলা দায়ের করে যেখানে অভিযোগ করা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনটি জাতীয় নির্বাচন ‘ভয়-ভীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে’ ভোটারবিহীনভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। মামলায় সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ এবং সরকারি কর্মচারী হিসেবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এরপর ২৫ জুন মামলাটিতে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়। এতে ২০১৪ সালের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (Kazi Rakibuddin Ahmad), ২০১৮ সালের সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা (AKM Nurul Huda), এবং ২০২৪ সালের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপদস্থদের নামও মামলায়
এ মামলায় শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের সাবেক প্রধানরাই নয়, অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন একাধিক সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। তাঁদের মধ্যে আছেন: হাসান মাহমুদ খন্দকার (Hassan Mahmud Khandker), এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)।
জনগণের ভোটাধিকার ও মামলার সাক্ষী
মামলায় বলা হয়েছে, তিনটি জাতীয় নির্বাচনে “গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম, খুন ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে” বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। এমনকি “ভোট ছাড়াই” নির্বাচিত ঘোষণা করে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এই মামলার সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনি এলাকাগুলোর ভোটার, ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, কিছু সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিং অফিসার ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের। ব্যালট পেপারে থাকা সিল ও স্বাক্ষর পরীক্ষা করলে প্রকৃতপক্ষে ভোট প্রদান করা হয়েছে কি না, সেই রহস্যও উদঘাটন সম্ভব হবে বলে মামলায় দাবি করা হয়।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ এবং আদালতের স্পষ্ট অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটরের মন্তব্য—“আউয়ালরা শাস্তির আওতায় আসলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে”—নতুন করে ভোটের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে।