বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (Begum Rokeya University) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের একবছর পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হলো আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র। গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুর শহরে দিনদুপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উঠেছিল ক্ষোভের ঝড়। সেই ঘটনায় এখন আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
গত ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা। তদন্তে উঠে এসেছে—রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনারসহ মোট ৩০ জন এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। অভিযোগপত্রে নাম এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম (Shariful Islam), পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন (Amir Hossain), সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় (Sujon Chandra Roy) এবং ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরীসহ (Imran Chowdhury) আরও ২৬ জনের।
তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি সাঈদকে হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটিও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে জমা দেওয়া হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, চারজন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন—এরা সবাই ঘটনাকালীন সময় প্রশাসন কিংবা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাকি ২৬ জন এখনও পলাতক বা নজরদারিতে রয়েছেন।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। ওইদিন বেলা দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে পার্ক মোড়ে পুলিশি উপস্থিতির মধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনাটি। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে উঠে আসে, হত্যার পূর্বে সাঈদকে মারধর করা হয় এবং পরে গুলি চালানো হয়।
এই ঘটনার পর ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ক্যাম্পাসে একের পর এক বিক্ষোভ, মানববন্ধন, রোডমার্চের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে গতি আসে। যদিও শুরুতে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে, সময়ের দাবিতে তদন্ত প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করতে হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলায় বিচার শুরু হওয়ার পথ তৈরি হলো। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এখনো নির্ধারিত না হলেও আইনজ্ঞদের মতে, উচ্চ-প্রোফাইল এই মামলাটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিণতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।