স্বৈরাচার পতনের লড়াইয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অধ্যায় যেন আর ফিরে না আসে—এই বার্তা দিয়েই জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি ঐক্য গড়ে তুলতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কাউকে স্বৈরাচার হতে উৎসাহিত না করে। জনগণ রাস্তায় নামলেই স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত।’
গণ-অভ্যুত্থানের স্মরণ শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং তা এক দৃঢ় সংকল্পের প্রকাশ—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর পর বিদ্রোহের মাধ্যমে এক লক্ষ্য অর্জন করেছিলাম। কিন্তু তার পেছনে ছিল আরও বড় স্বপ্ন—নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের। এবার আমরা শপথ করছি, আর ১৬ বছর অপেক্ষা করব না।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই-অভ্যুত্থান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা হলো, যখনই স্বৈরাচারের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাবে, জনগণ যেন সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ‘স্বৈরাচারের প্রথম পাতাটি খোলার আগেই যেন আমরা তাকে রুখে দিতে পারি।’
অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন সেই তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক ও রিকশাচালকদের—যারা গত বছরের অভ্যুত্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সাহস, ত্যাগ, দৃঢ়তা আজ আমাদের পাথেয়।’
মাসব্যাপী এই কর্মসূচিকে তিনি ‘একটি নতুন শপথের সূচনা’ বলে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, “গত বছরের জুলাইয়ে যে জাতীয় ঐক্য আমরা দেখেছি, এবার আমরা চাই সেই ঐক্য আরও দৃঢ় হোক। আমাদের এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে—গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং সেই মূল্যবান সংস্কারের সম্ভাবনাকে ধরে রাখা, যেটি রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, সামনে পথ কঠিন, তবে সম্ভাবনার দিগন্ত বিশাল। ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—জনগণ যখন জাগে, তখন তাদের থামানোর শক্তি কারও নেই।’
তিনি বলেন, জুলাই ও আগস্টজুড়ে আয়োজিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে স্মরণ করব। ‘এই দিনগুলোতে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন—তাদের রক্তপাত যেন বৃথা না যায়, সেই লক্ষ্য পূরণে আবারও আমরা শপথ নেব। এই কর্মসূচি আমরা প্রতিবছর পালন করব, যাতে স্বৈরাচার আর কোনোদিন মাথা তুলতে না পারে।’
শেষে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচি সফল হোক। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও বলিষ্ঠ হোক। এই হোক আমাদের শপথ।’