নতুন সংবিধানের দাবিতে গণপরিষদ নির্বাচন এগিয়ে নিতে দৃঢ় অবস্থান এনসিপির

ফ্রিডম পার্টির মতো ক্ষমতাসীন স্বৈরশাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে ‘আপস’ কিংবা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর মতো ‘হঠকারিতা’—এই দুই পথের কোনোটি বেছে নিতে রাজি নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party – NCP)। দলটি ঘোষণা দিয়েছে, নিজেদের লক্ষ্য ও অবস্থানে ‘পরিষ্কার ও সৎ’ থেকে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবিকে সামনে রেখে তারা রাজনৈতিক পথচলা অব্যাহত রাখবে।

রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিনব্যাপী সাধারণ সভায় প্রায় দেড় শতাধিক নেতা অংশ নেন। দীর্ঘ প্রায় ১৭ ঘণ্টার এই বৈঠকে জুলাই মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত সারা দেশের পদযাত্রা কর্মসূচির মূল্যায়ন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক অবস্থান ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

পদযাত্রা কর্মসূচির মূল্যায়ন

জুলাই মাসে দেশের ৬০টি জেলায় পদযাত্রা করেছে এনসিপি। তবে গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে আর পদযাত্রা হয়নি। আবার ২১ জুলাই উত্তরা দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরেও কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শিগগিরই এই পাঁচ জেলায় নতুন করে পদযাত্রা আয়োজন করা হবে, যদিও নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি।

জুলাই ঘোষণাপত্র ও কক্সবাজার বিতর্ক

৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে’ প্রকাশিত ঘোষণাপত্র নিয়ে নেতাদের সমালোচনা ছিল তীব্র। তাদের মতে, ঘোষণায় গণ-অভ্যুত্থানের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। একই দিনে এনসিপির পাঁচ নেতার কক্সবাজার সফর নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। অনেকের মন্তব্য, এমন ঐতিহাসিক দিনে ওই সফর নেতাদের করা উচিত ছিল না। তবে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ ও অযাচিত গোয়েন্দা নজরদারির নিন্দা জানানো হয় এবং রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলার কথা বলা হয়।

আপস নয়, হঠকারিতাও নয়

সভায় আলোচনায় আসে, এনসিপিকে নিয়ে নির্বাচনী সময়সূচি বিলম্বের প্রচার চালানো হলেও তারা কোনোভাবেই এমন তৎপরতায় যুক্ত হবে না। বর্তমান অগ্রাধিকার হলো সংস্কারের ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন। এনসিপির এক দায়িত্বশীল নেতা স্পষ্ট করেন, “আমরা ফ্রিডম পার্টির মতো আপস করব না, জাসদের মতো হঠকারীও হব না। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের লক্ষ্যে সৎভাবে কাজ করব।”

এছাড়া, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কার্যকর করতে প্রশাসন ও ব্যবসায়ী মহলেও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। নেতারা জানান, ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রগুলোতে রাজনৈতিক কাজ জোরদার করা হবে।

সভার শেষ পর্ব ও স্লোগান

বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত প্রথম দফার বৈঠক হয়, যা পরদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পুনরায় চলে। বৈঠক শেষে নেতারা স্লোগান দেন—“এবার চায় জনগণ, গণপরিষদ নির্বাচন” এবং “বাংলাদেশের সমাধান, নতুন এক সংবিধান”।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, দুই দিনব্যাপী এই সভায় বিচার, মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ, নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা চাই জনগণের জন্য নতুন একটি সংবিধান, যা বাস্তব পরিবর্তন আনবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *