নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রশ্নে দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Professor Ali Riaz)। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি হিসেবে তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে চলতি জুলাই মাসেই একটি পূর্ণাঙ্গ ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন সম্ভব।
আজ (২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)-এর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনায় এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। বৈঠকে অংশ নেয় দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয় গুরুত্ব পায়: সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন। এর মধ্যে প্রথম দুটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বড় ধরনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে।” আদমশুমারির ভিত্তিতে প্রতি দশ বছর অন্তর আসন পুনর্নির্ধারণের জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনতে যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে সব দল একমত হয়েছে। সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের (১)(ঘ)-তে আইনের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ এসেছে, যা এই প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ২০২১ সালে পাস হলেও, ২০২৫ সালে তা সংশোধন করে কার্যকর রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কমিটির কাঠামো, সদস্যপদ ও ক্ষমতা সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কথাও আলোচনায় এসেছে। সব দল এ ব্যাপারে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, “ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে আসন পুনর্নির্ধারণে দলীয় ঐক্যমত্য প্রতিফলিত হয়।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে এবং একটি কাঠামোগত প্রস্তাবেও একমত হয়েছে। তবে, এই সরকার কতদিন থাকবে—এ নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে ৯০ দিনের জন্য, আর নির্বাচন কমিশন দিয়েছে ১২০ দিনের সময়সীমা। পাশাপাশি, প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ কীভাবে হবে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো এ মুহূর্তে অনেক কাছাকাছি অবস্থানে এসেছে। আলোচনা ইতিবাচক। সহযোগিতা থাকলে জুলাই মাসের মধ্যেই ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ সম্ভব।”
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক প্রতিনিধির মতে, এটি হতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যেখানে দীর্ঘদিনের বিভাজনের পর রাজনৈতিক দলগুলো কার্যকর সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে এগিয়ে আসছে।