আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Mohammad Tazul Islam) জানিয়েছেন, আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং গাইবান্ধা (Gaibandha) জেলার আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে এই সাজা কার্যকর হবে শুধুমাত্র তারা আত্মসমর্পণ করলে বা গ্রেপ্তার হলে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন করি, যেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের মধ্যে একটি কথোপকথন হয়েছে ফোন বা জুমের মাধ্যমে। এতে শেখ হাসিনা ২২৭ জন মামলাকারীকে হত্যার লাইসেন্স পাওয়ার কথা বলেন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার দায়ীদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি তদন্ত ও বিচার সংশ্লিষ্টদের হুমকিও দেন, বলেন, তাদের একটি তালিকা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে চাকরি করতে হলে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।”
এই কথোপকথনই আদালত অবমাননার শামিল উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর জানান, “শুধু হুমকিই নয়, এটি বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার স্পষ্ট প্রচেষ্টা, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর ১১(৪) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
প্রথমে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে শোকজ করে তাদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি চায়। তারা অনুপস্থিত থাকায়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তলব করা হয়। তাতেও তারা সাড়া না দেওয়ায় আদালত তাদের পক্ষে একজন করে ডিফেন্স লয়ার নিয়োগ দেন এবং অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করা হয়।
চূড়ান্ত শুনানিতে প্রসিকিউশন, ডিফেন্স ও অ্যামিকাস কিউরি তাদের যুক্তি পেশ করেন। এরপর আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। তাতে বলা হয়, কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা সিআইডি (CID) করেছে এবং নিশ্চিত হয়েছে, এটি এআই-জেনারেটেড নয় বরং প্রকৃত কথোপকথন, যেখানে কণ্ঠ যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের।
এই কথোপকথন প্রথম প্রকাশ হয় ‘দৈনিক কালবেলা’র অনলাইনে, পরে অন্যান্য গণমাধ্যমও তা তুলে ধরে।
চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, এই হুমকির ফলে মামলার সাক্ষীরা এখন ভয় পাচ্ছেন, কেউ কেউ সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। নতুন বাদীরাও মামলা করতে সাহস করছেন না। উদাহরণস্বরূপ, রংপুরের আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড এবং ঢাকার চানখারপুলে ছয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোয় শেখ হাসিনার নাম আসামি হিসেবে রয়েছে, এবং মামলাগুলো এখন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে তদন্ত কর্মকর্তারাও আতঙ্কে থাকেন। যদি তারা ভয় পান, তাহলে তদন্ত থেমে যাবে। তাই আদালতের উপর আঘাত এবং বিচার ব্যবস্থার চলমানতাকে ব্যাহত করার দায়ে আমরা কনটেম্পট মামলা করেছি।”
শেষে চিফ প্রসিকিউটর আশ্বস্ত করে বলেন, “আমরা আইন অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাব। ভীত নই, তবে আমাদের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন।”