গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “৪ আগস্ট আমি নিজে যাত্রাবাড়ীর দায়িত্বে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে ছাত্রদলের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী আওয়ামী সন্ত্রাসীমুক্ত করেছি।”
তিনি আরও জানান, ঐ সময় শাহবাগ জোনের দায়িত্বে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এবং যুবদলের নেতাকর্মীরা। তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শাহবাগেও সফলতা আসে বলে দাবি করেন তিনি।
রাকিব বলেন, “৩ আগস্ট আমি শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলাম, যেখানে হাজার হাজার ছাত্রদলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন—কেউ একত্রিত, কেউ বিচ্ছিন্নভাবে। এরপর আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, যে যেভাবে পারে ঢাকায় প্রবেশ করো।’ সারা দেশের নেতাকর্মীদের আমরা ঢাকার বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আগেভাগেই রাখি।”
“৪ আগস্ট আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানিয়ে দেন, এটাই শেষ সুযোগ। তোমরা সাড়ে ১৫ বছর ধরে লড়াই করছো, এখন শেষ ধাক্কা দিতে হবে। রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও উত্তরা—এই ছয়টি জোনে যেভাবেই হোক সফল হতে হবে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল—সবাই জোন ভাগ করে নেয়।”
‘আওয়ামী লীগের শেষ মরণ কামড়’
রাকিব বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম আওয়ামী লীগের শেষ সময় চলছে। তারা শেষ মরণ কামড় দেবে। তাই আমরা আমাদের সব ইউনিটকে জানিয়ে দিই—লাঠিসোঁটা নিয়েই যেতে হবে, কারণ ছাত্রলীগ খালি হাতে আসবে না।”
তিনি জানান, সকালে তারা দনিয়া কলেজ ও বর্ণমালা স্কুলের সামনে জড়ো হন। পরে সিদ্ধান্ত হয় যাত্রাবাড়ী মোড় দখলের। “বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া সম্ভব না। সাংগঠনিকভাবে চেনা-পরিচয়ের ভিত্তিতে আমরা একত্র হই। কারণ যদি গুলি হয়, কেউ যেন পিছু না হটে,”— বলেন রাকিব।
রাকিবের ভাষ্য অনুযায়ী, দুপুর ১২টায় যাত্রাবাড়ী মোড়ে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় এমপি সজলের লোকজনের অবস্থান ছিল। “আমরা হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল শুরু করি। দনিয়া কলেজ থেকে শুরু করে পূবালী মাছ ভাণ্ডার পার হতেই ওরা আমাদের ওপর গুলি করে। কিন্তু আমাদের স্পিরিট এতটাই দৃঢ় ছিল যে কেউ পিছু হটে নাই। অল্প সময়েই আমরা যাত্রাবাড়ী দখলমুক্ত করি।”
তিনি বলেন, “ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়—কেউ থানায়, কেউ ধোলাইপাড়ে। এরপর আমরা ধোলাইপাড়েও যাই এবং সেখানেও ছাত্রদলের নেতৃত্বে দখল প্রতিষ্ঠা করি।”
ধোলাইপাড়ের পরে জুরাইন
এই ছাত্রনেতা আরও জানান, যাত্রাবাড়ী ও ধোলাইপাড়ের পর তারা মিছিল নিয়ে জুরাইনে পৌঁছান। “জুরাইন ইতিমধ্যেই ছিল আমাদের দখলে। সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে লড়াই করছিল। তাদের সঙ্গে একত্র হয়ে আমরা জুরাইন নিয়ন্ত্রণে রাখি।”
তিনি দাবি করেন, সেই আন্দোলনে ছাত্রদলের পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলের অংশগ্রহণ ছিল। “আমাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনটি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন, বাকিদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন,”— বলেন রাকিব।
এই দীর্ঘ বর্ণনায় ছাত্রদল সভাপতি তুলে ধরেছেন কিভাবে একটি সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে তারা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখলে রাখতে সক্ষম হন, যা তাদের মতে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ছিল আন্দোলনের ইতিহাসে।