সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার এক করুণ পারিবারিক ঘটনায়, দুই ছেলে মোক্তার হোসেন ও মানিক হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে প্রতারণার মাধ্যমে বৃদ্ধ মা-বাবার সব সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে জমিজমা নিজেদের নামে লিখে নেন তারা। পরে বৃদ্ধ দম্পতিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামে। ভুক্তভোগী সানোয়ার হোসেন মন্ডল (৬৭) ও তার স্ত্রী মোছা. মতিজান নেছা (৬০) বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত দুই ছেলে মোক্তার (৩৫) ও মানিক (২৮) পেশায় কৃষক হলেও দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধ দম্পতির ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সানোয়ার হোসেন ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া তিন বিঘা ফসলি জমি ও দুই বিঘা পুকুরে চাষাবাদ করে চলতেন। কিন্তু ছেলেদের বিয়ের পর সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। একসময় তারা মা-বাবাকে বোঝা মনে করতে শুরু করেন। খাবার, ওষুধ, পোশাক এমনকি থাকার জায়গার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেননি। সানোয়ার-মতিজান দম্পতি নিজের ঘরে পরবাসীর মতো জীবন যাপন করতে বাধ্য হন।
তিন বছর আগে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে মোক্তার ও মানিক তাদের সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা একটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কৌশলে স্বাক্ষর করিয়ে সম্পূর্ণ জমি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন।
সানোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা বুঝতেই পারিনি যে ওটা জমির দলিল। ভাতার কার্ডের কথা বলে আমাদের সব জমি লিখে নিয়েছে। এরপর কিছুদিন ভালো ব্যবহার করলেও হঠাৎ আচরণ বদলে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়, আমাদের গায়ের উপর অত্যাচার চালায়।”
তিনি আরও জানান, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে স্ত্রীকে নিয়ে স্ত্রীর বড় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিছুদিন পর ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি নেন, কিন্তু বয়স ও অসুস্থতার কারণে চাকরি হারান। এরপর ফিরে এসে নিজ ঘরে উঠতে চাইলে ছেলেরা বাধা দেয়। বাধ্য হয়ে টিনের ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখান থেকেও মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
মতিজান নেছা বলেন, “বয়সের কারণে আমরা কিছুই করতে পারি না। ছেলেদের অত্যাচারে জীবনযাপন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।”
স্থানীয় বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদ (Baruhas Union Parishad) সদস্য মো. রাজিব সরকার রাজু জানান, দুই ছেলের প্রতারণার বিষয়টি বহুবার গ্রাম্য সালিশে ওঠে। কিন্তু ছেলেরা কোনো সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। অন্যদিকে, অভিযুক্ত মোক্তার হোসেন দাবি করেছেন, “বাবা-মা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন।”
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান (Nusrat Jahan) বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ওই দম্পতিকে সহায়তা করার ব্যাপারে আমরা ভাবছি।”