গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রনেতাদের ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার পর, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ সম্পর্কিত একটি রাষ্ট্রীয় ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয় তিন পৃষ্ঠার একটি খসড়া। সেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে সংবিধান, ১/১১ ষড়যন্ত্র, আওয়ামী লীগের শাসনামল এবং ‘নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা’ গঠনের অভিপ্রায় স্পষ্ট করা হয়।
তবে এই খসড়াকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ ও দ্বিধা। বিএনপি (BNP) এই ঘোষণাপত্রে কয়েকটি সংশোধনী চায়, পাশাপাশি দাবি তোলে এটি যেন সাংবিধানিক নয়, বরং রাজনৈতিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
“মুক্তিযুদ্ধ এক নম্বরে”—বিএনপির প্রস্তাব
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “ঘোষণাপত্রে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে প্রথমে রাখার কথা বলেছি। এরপর ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস, ১৯৯০ সালের সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এবং সর্বশেষ ৫ আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান—সবই উল্লেখযোগ্যভাবে রাখা হয়েছে।”
তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “এটার (জুলাই ঘোষণাপত্র) কোনও সাংবিধানিক ও আইনি গুরুত্ব আছে বলে আমরা মনে করি না। তবে এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল, রাজনৈতিক দলিল। রাজনৈতিক দলিল হিসেবে এটিকে সংরক্ষণ করা যায়। রাজনীতিতে আবেগের তেমন কোনও গুরুত্ব নেই। এটি রাষ্ট্রীয় ব্যাপার।”
সমমনা দলগুলোর মিল আছে, দ্বিধাও স্পষ্ট
বিএনপির অবস্থানে সমর্থন দিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি–র সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, “অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অভ্যুত্থানের সময় যে কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর স্বীকৃতি দিতে গিয়ে এই প্রোক্লেমেশনের চিন্তা এসেছে। ভবিষ্যতে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এর সাংবিধানিক অবস্থান নির্ধারণ করা যেতে পারে।”
তবে সব দৃষ্টিভঙ্গি একরকম নয়। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এর মহাসচিব রেদোয়ান আহমদ বলেন, “তাহলে তো আমাদের সকল আন্দোলনের ঘোষণাপত্র দিতে হবে। আমি মনে করি, সব আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রেখে একটি জাতীয় সনদ হওয়াটাই বাস্তব ও যুক্তিসংগত।”
ঘোষণাপত্র কবে? সরকারের সিদ্ধান্ত অনিশ্চিত
‘জুলাই অভ্যুত্থান’ প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেছে, আর বিএনপির সংশোধনী প্রস্তাবও জমা পড়েছে চার মাস আগে। কিন্তু এখনো সরকার ওই ঘোষণাপত্র কবে জারি করবে, বা আদৌ জারি করবে কি না, তা জানায়নি।
বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো বলছে, ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয় বিষয়, এর দায় সরকারের। সরকার যদি তা জারি না করে, এবং কোনো দল নিজে থেকে তা প্রকাশ করে, তাহলে তা হবে কেবল সেই দলের দলিল। সেখানে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিফলিত হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকলেও, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐকমত্য না থাকলে এটি রাষ্ট্রীয় দলিল নয়, বরং দলভিত্তিক ঐতিহাসিক বিবরণ হিসেবেই থেকে যাবে।