‘জুলাইয়ের বিপ্লব’ মব নয়, প্রতিরোধের প্রতীক: মাহফুজ আলম

জুলাইয়ে রাজপথে যাঁরা নেমেছিলেন, তাঁরা ‘মব’ নয়, তাঁরা ইতিহাসের অংশ—এমনটাই বললেন মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)। রাষ্ট্রের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাহফুজ আলম বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে ‘জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা’কে ‘মব’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতার কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মব ভায়োলেন্স মানে উদ্দেশ্যহীন প্রতিহিংসার উন্মাদনা, আর জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা ছিল সচেতন, লক্ষ্যনির্ধারিত ও গণতন্ত্রকামী। মাহফুজ আলম লিখেছেন, “জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব নয়। মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে দরকার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, আইনের শাসন ও কার্যকর গণতন্ত্র।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম মব ভায়োলেন্স শুরু হয়েছিল বিহারি জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা দিয়ে। এরপর বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ইন্ধনে ছাত্র, তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো হয়েছে এমন আক্রমণ। ‘জনতার মঞ্চ’, ‘শাহবাগ’, ‘২৮ অক্টোবর’—এসব ঘটনাকেও তিনি মব জাস্টিস হিসেবে অভিহিত করেন।

পোস্টে মাহফুজ আলম জানান, গত ১৬ বছরের গণতন্ত্রহীনতা এবং আইনের শাসনের অবক্ষয়ই বর্তমান মব মানসিকতার জন্ম দিয়েছে। তিনি মনে করেন, বর্তমান সামাজিক ফ্যাসিবাদ আসলে শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদেরই প্রতিক্রিয়া এবং বিকার।

তিনি আরও বলেন, “ইসলামোফ্যাসিস্ট বলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং, জুলাই যে একটি ‘ক্রস-ইডিওলজি ডায়ালগ’-এর সুযোগ তৈরি করেছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।”

মাহফুজ আলম অভিযোগ করেন, জুলাইয়ের বিপ্লবের পর যারা মব সহিংসতার জন্য দায় নিচ্ছেন না, সেই ছাত্র-জনতাকেই এখন দায়ী করা হচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক ফ্যাসিবাদের জন্য, যদিও তারা এসব ঘটনার অংশীদার নন।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “জুলাইয়ের পরে যদি সত্যিকারের মব সহিংসতা হতো, তাহলে এত সুশীল ভঙ্গি, এপলজেটিক (ক্ষমা চাওয়া ধাঁচের) আলোচনাও থাকত না।”

তিনি আরও মনে করেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীহীন দেশ এক-দেড় মাস ধরে ছিল নিরাপদ, যা প্রমাণ করে এটি ‘মবোক্রেসি’ ছিল না। তিনি বলেন, “স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরকেও ছাত্র-জনতা রক্ষা করেছিল। বিপ্লবী ছাত্রদের প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়ার দিকটি স্ক্রিপ্ট রাইটাররা বিশ্বাসযোগ্যতা আনার চেষ্টা বলেই ধরেছে।”

মাহফুজ আলম শেষদিকে বলেন, “জুলাই বিপ্লব শেখ মুজিবের নাতি জয়ের কথামতো মবোক্রেসি ছিল—এই বর্ণনা বিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়েছে, তাদের ‘মব’ বলা রাজনৈতিক শিষ্টাচারেরও লঙ্ঘন।”

পুনশ্চ-তে তিনি লেখেন, “মব মানে হলো প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ গোষ্ঠী। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা সে পথে হাঁটেনি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা। এদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ।”

এই পোস্টে একদিকে যেমন ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি তীব্র অবস্থান নেন, অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতাকে প্রশংসা করেন। তার ভাষ্যে স্পষ্ট—জুলাই একটি দৃষ্টান্ত, মব নয়; এটা প্রতিরোধের চিত্র, প্রতিহিংসার নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *