লাল ব্যাজ ধারণের মূল প্রস্তাব ছাত্রদলের নাছিরের—এ নিয়ে যা বললেন আব্দুল কাদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও, আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ‘লাল ব্যাজ’ ধারণের সূচনাকর্তা কে ছিলেন—সে প্রশ্নে ফের আলোচনায় তীব্রতা এসেছে। সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল কাদের দাবি করেছেন, এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচির প্রথম প্রস্তাব এসেছিল নাছির উদ্দীন নাছির (Nasir Uddin Nasir)-এর কাছ থেকে, যিনি তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (Jatiyatabadi Chhatra Dal)-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

আব্দুল কাদের, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়কারী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-এর আহ্বায়ক ছিলেন, রবিবার (৬ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “২৯ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকার যখন কালো ব্যাজ ধারণের আহ্বান জানায়, তখন বিকেলে নাছির ভাই আমাকে লাল ব্যাজ ধারণের কথা বলেন।” তিনি আরও দাবি করেন, একই দিনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব এবং নাছিরের সঙ্গে একাধিকবার এই বিষয়ে আলোচনা হয়।

এই আলোচনার ধারাবাহিকতায় কাদের ফোন দেন সাদিক কায়েম (Sadik Kayem)-কে, যিনি তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। কিছু সময় পর সাদিকও লাল ব্যাজের প্রস্তাবে সম্মতি দেন বলে জানান কাদের।

কাদের জানান, প্রতিদিনের মতো সেদিনও আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে মাসউদ, রিফাত, মাহিন ও তিনি আলোচনায় বসেন। রিফাত শোক দিবসে প্রতিবাদ জানাতে চোখে-মুখে কালো কাপড় বাঁধার প্রস্তাব দেন। তখন কাদের জানান, নাছিরের প্রস্তাব অনুযায়ী তারা লাল কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। মাহিনও একই মত দেন। পরে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

এই কর্মসূচিকে আরও ছড়িয়ে দিতে তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছবি দিয়ে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনের ডাক দেন, এবং যাদের কাছে লাল কাপড় ছিল না, তাদের প্রোফাইল ছবি লাল রঙে রাঙাতে অনুরোধ জানানো হয়। সেই সময় রিফাত রশিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি এই বার্তা পৌঁছে দেন।

হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের কৌশলগত পরামর্শও দেন সাদিক কায়েম, যা সে সময়ের ফেসবুক পোস্টগুলোতে পরিলক্ষিত হয়।

তবে এই প্রসঙ্গে আরেকটি ভিন্ন দাবি এসেছে ঢাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি এস এম ফরহাদ (SM Farhad)-এর পক্ষ থেকে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব প্রথম আমি দিই। আমি সরাসরি সাদিক কায়েম ভাইকে এ ব্যাপারে বলেছিলাম এবং আমরা পরে প্রেস বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে তা আন্দোলন সমন্বয়কারীদের পাঠাই।”

এই পরস্পরবিরোধী দাবিতে ফের আলোচনায় এসেছে লাল ব্যাজের সূচনালগ্ন। আন্দোলনের স্মৃতিগুলো এখন ইতিহাসের অংশ হলেও, কার মাধ্যমে প্রতীকী প্রতিবাদের এই ধারণার জন্ম তা নিয়েই স্পষ্ট বিভাজন রয়ে গেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *